সীমান্তে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুদ্ধের জন্য দেশ সদা প্রস্তুত বলে জানিয়ে দিলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। দেশের এক প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম আয়োজিত প্রতিরক্ষা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, জল, স্থল বা অন্তরিক্ষ—কোনো দিক থেকে দেশ আক্রান্ত হলে তার যথাযথ জবাব দিতে ভারত প্রস্তুত। রাজনাথ বলেন, ‘আমরা কখনো কারও জমি দখল করি না। করিওনি। কিন্তু কেউ আক্রমণ করলে আমাদের বাহিনী তার উপযুক্ত জবাব দেবে। যে কোনো ধরনের সংকটের মোকাবিলায় আমরা সদা প্রস্তুত।’ খবর এনডিটিভির।
রাজনাথ সিং এই মন্তব্য করলেন ঠিক সেই সময়, যখন চীন তার প্রতিরক্ষা বাজেট ৭ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার চীন এই বাজেট বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। আগামী অর্থবছরে প্রতিরক্ষা খাতে তাদের ব্যয় দাঁড়াবে আনুমানিক ২২২ বিলিয়ন ডলার। চীন যে সময় বাজেট বৃদ্ধি করল, ঠিক সেই সময় ভারত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ রাষ্ট্র মালদ্বীপে তাদের সামরিক উপস্থিতি ভারতের চিন্তা বাড়িয়েছে। মালদ্বীপে চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনিত ঘটছে। একই সময়ে চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নানা ক্ষেত্রে বিস্তৃত হচ্ছে।
চীনের একটি যুদ্ধজাহাজকে মালদ্বীপে অনির্দিষ্টকালের জন্য নোঙর করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মালদ্বীপকে বিনা মূল্যে সামরিক সহযোগিতা দিতে চীন চুক্তিবদ্ধও হয়েছে। এই ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে চীন-ভারত সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বারবার সেই অবনতির কথা জানিয়ে বলেছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সম্পর্কও স্বাভাবিক হবে না। সেই আশা করাও অন্যায়। ওই সংঘর্ষের পর দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে সীমান্ত অবস্থান সংঘর্ষের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে বহু বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এখনো তা পুরোপুরি পুরোনো অবস্থায় ফেরানো যায়নি।
ভারতের বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, ওই সংঘর্ষের সময় থেকে পূর্ব লাদাখে ভারতের ২ হাজার বর্গকিলোমিটার জমি চীনের কবজায় রয়েছে। সরকারের অবশ্য দাবি, ভারতের কোনো জমি চীনের দখলে নেই। বিরোধীদের প্রশ্ন, চীনের দখলে যদি কোনো জমি না থাকে, তাহলে সীমান্ত অবস্থান নিয়ে কেন দুই দেশ এখনো আলোচনা চালাচ্ছে। বিরোধীদের এই অভিযোগের সদুত্তর সরকার আজও পরিষ্কারভাবে দিতে পারেনি।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীরা এই প্রশ্ন নতুন করে তুলতে পারে। সেদিকে নজর রেখেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই মন্তব্য করলেন বলে কোনো কোনো মহলের ধারণা। এই মহল মনে করছে, সেনাবাহিনীর মনোবল বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের মানুষকে নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত করাই রাজনাথের মূল উদ্দেশ্য। সেই কারণে তিনি বারবার ভারতের শক্তিশালী হয়ে ওঠার ওপরে জোর দিয়েছেন। সম্মেলনে রাজনাথ সিং বলেছেন, ‘পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে ভারতীয় সেনারা যে বীরত্ব দেখিয়েছিলেন, তা থেকে এটাই প্রমাণিত যে ভারত দুর্বল দেশ নয়। ভারতকে কেউ চোখ রাঙিয়ে যাবে, আর আমরা বসে বসে তা দেখব, সেদিন অতীত। যোগ্য জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত।’
অতীতের সরকাগুলোর সঙ্গে আজকের ভারতের পার্থক্য কোথায়, রাজনাথ ওই সাক্ষাৎকারে তা-ও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আগে ভারতের কথা অন্যরা এতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিত না। আজ নেয়। উদাহরণ টেনে রাজনাথ বলেন, অটল বিহারি বাজপেয়ীর আমলেও আমি মন্ত্রী ছিলাম। তখন দেখতাম, বিদেশিরা আমাদের বক্তব্য ততটা গুরুত্ব দিত না। আজ দেয়। কারণ, আমরা আত্মনির্ভর হতে পেরেছি। অতীতের সরকার প্রতিরক্ষাকে গুরুত্ব দিত না, সে কথা বলছি না। বলছি, আজ আমরা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হতে পেরেছি। তাই বিশ্বে ভারতের মর্যাদা ও গুরুত্ব বেড়ে গেছে।