টানা দরপতনের মধ্যে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। প্রায় প্রতিদিনেই লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন। আগের সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহজুড়েও দরপতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা চার সপ্তাহ পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার। এই টানা পতনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি উধাও হয়ে গেছে।
গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। সপ্তাহজুড়ে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার প্রায় পাঁচগুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের। এতে এক সপ্তাহেই ডিএসইর বাজার মূলধন প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। সেই সঙ্গে দৈনিক গড় লেনদেন ৭ শতাংশের ওপরে কমেছে। আর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ২ শতাংশের বেশি।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩২০টির। আর ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৬০ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১১ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ১ হাজার ২৯১ কোটি টাকা বা দশমিক ১৭ শতাংশ। তার আগের দুই সপ্তাহের বাজার মূলধন কমে ৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং ৬ হাজার ৬০ কোটি টাকা। এতে চার সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমলো ২৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা।
এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪১ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৯ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা দশমিক ৩১ শতাংশ। তার আগের দুই সপ্তাহে কমে ৬২ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং ৩৭ দশমিক ১০ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ চার সপ্তাহের ব্যবধানে সূচকটি কমেছে ২৬০ দশমিক ৬০ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ৩২ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১২ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৬০ শতাংশ।
আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ২৩ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে দশমিক ৭০ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮১০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৮৭৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৬৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বা ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৩ হাজার ৫০৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৫৪৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বা ১৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। মোট লেনদেন বাড়ার কারণ গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু-ওয়াং সিরামিকের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২০৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সেন্ট্রাল ফার্সামিউটিক্যালসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ৯৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মুন্নু ফেব্রিক্স।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আফতাব অটোমোবাইলস, ফরচুন সুজ, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, বেস্ট হোল্ডিং, ফু-ওয়াং ফুড, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো।