আগামী বছরের রমজানে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে দাম বেঁধে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
আজ রোববার সচিবালয়ে কৃষিপণ্য সরবরাহে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এবং রাশিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘প্রোডিনটর্গ’ এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউএইতে (সংযুক্ত আরব আমিরাত) দেখলাম ১৮টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের রাষ্ট্রীয় সার্কুলার দিয়ে দিয়েছে, এই পণ্যগুলোর দাম কেউ এ মাসে (রমজান) বাড়াতে পারবে না। আমরা এবার হয়তো পারি নাই। ইনশাআল্লাহ আমাদের সাপ্লাই চেইন ইম্প্রুভ করে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ ইম্প্রুভ করে আগামীতে কেবিনেটের অনুমোদন নিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের একটা কমপ্লিটলিস্ট তৈরি করবো। ওইভাবে এটার সাপ্লাই বাড়ানো এবং পণ্যের নির্ধারিত দাম আমরা যাতে ঠিক করতে পারি।
আপনারা বাজার সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করছেন, কিন্তু সেভাবে প্রভাব পড়ছে না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই যারা রোজার অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানি ও উৎপাদন করেন তাদের সঙ্গে বসেছি। আমদানি এবং উৎপাদন পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে, এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি।
বাজারে রমজান উপলক্ষে এই মুহূর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত দেড় মাসে চালের বাজারে একটা অস্থিরতা ছিল। সেটা আল্লাহর অশেষ রহমতে স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে। চালের দাম নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। তেলের দাম আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, রমজান উপলক্ষে আজ থেকে বাজার তদারকি আরও বাড়াবো। যাতে কেউ সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৩ টাকা, খোলা তেল প্রতি লিটার ১৪৯ টাকার ওপরে কেউ বিক্রি না করে। সেই ব্যাপারে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেবো। কোনোভাবে যাতে এটার ব্যত্যয় না হয়, সেই চেষ্টা করবো। রমজান উপলক্ষে আজ থেকে আমরা বাজার পরিদর্শন শুরু করবো।
আহসানুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কিন্তু নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও কিন্তু নির্দেশ দিয়েছেন বাজারে সরবরাহ চেইনে কেউ যদি ব্যাঘাত ঘটায়, তাহলে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা পদক্ষেপগুলো নিচ্ছি। একেবারে যে উন্নতি হয়নি তা নয়। ভারত থেকে পেঁয়াজ আনার জন্য তাদের সম্মতি আমরা পেয়েছি। দু-একদিনের মধ্যে পেঁয়াজও ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশে ঢুকবে।
সুপারশপগুলোতে নির্ধারিত দামের চেয়ে কমে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে দাবি করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যখন কাঁচাবাজারে গেলাম তখন দেখলাম প্রত্যেকটি জিনিসের দাম নির্ধারিত দামের চেয়ে দুই-তিন টাকা বেশি। একেবারে খুচরা পর্যায়ে কাঁচাবাজারগুলো অস্থায়ীভাবে থাকে, ওইগুলো আমরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো সেটা এখন বের করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রথমে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই- সরবরাহ নিশ্চিত করা, কোনোভাবেই যেন সরবরাহে ঘাটতি না হয়। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সরবরাহ নিশ্চিত করতে পেরেছি। বাজার মনিটরিং ইনশাল্লাহ আমরা বাড়াবো। টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে যে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দেওয়া হয় এটা সম্পূর্ণ শুরু হলে এতেও বাজারে একটা চাপ কমে যাবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে কৃষিপণ্যের সর্বোচ্চ একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিতে।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, হঠাৎ করে শুনলাম লেবুর দাম বেড়ে গেছে। শসার দাম, পেঁয়াজের দাম…। এটি কিন্তু সারা বাংলাদেশের তুলনায় ঢাকার কয়েকটি জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই বলবো। এটি কিন্তু গুটিকয়েক জায়গায়। সারাদেশের পরিস্থিতি কিন্তু এটা না। অনেক সময় হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যায়। দেখা যাবে আজ বা কাল সবাই বাজারে ঝাঁপিয়ে পড়বো ১০/২০ দিনের সাপ্লাই একদিনে কিনে ফেলবো। ডিমান্ড বেড়ে গেলে হয়তো ওই অনুযায়ী সাপ্লাইটা আসে না। এজন্যও (আকস্মিক দাম বৃদ্ধি) হতে পারে।
তিনি বলেন, আমি আজ সকালে শুনলাম একজন বিক্রেতা বলতেছে বছরে একটাবার রোজা আসে লেবু দিয়ে একটু ই করতে হয়, কৃষকরা একটু পয়সা পায়, আমরাও দুইটা পয়সা পাই। ব্যাপার কিন্তু এটাই। এখানে কিন্তু কোনো বড় গ্রুপ কাজ করতেছে না। একটা ডালা নিয়ে তিনি ব্যবসা করতেছেন, সে চিন্তা করতেছে দুই টাকা বেশিতে পাইলে সে দুই টাকা বেশি লাভ করবে। ভেরি ইনোসেন্টলি সে এ কথাটা বলেছে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের একটু সততার সঙ্গে ব্যবসাটা করতে হবে। ধর্মীয় অনুভূতিটাকে প্রাধান্য দিয়ে যাতে আমরা ব্যবসাটা করি।
রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন চালের স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও গম, ভুট্টা, ডালের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। এগুলো আমাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে আনতে হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গমের উৎস হলো রাশিয়া। আজ যে প্রোডাক্টগুলো তারা সাইন করলো- রাশিয়ান ফেডারেশন থেকে তারা যদি সাপোর্ট দিতে পারে তাহলে আমাদের ফুড সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির একটা বড় বাফার স্টক আমরা তৈরি করতে পারবো।
টিসিবিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে সাবসিডাইজ প্রাইজে পণ্য দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পরবর্তীতে ফেয়ারপ্রাইজে মাল্টিপল প্রোডাক্ট সরবরাহ করবো, যদি আমাদের এই রকম সোর্স থাকে।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, শুধু রাশিয়া থেকে নয় কয়েকটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আনতে আমরা ভারতের সঙ্গেও একটি চুক্তি করার জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছি। মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।