টাইগারদের ৩ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে সমতা শ্রীলঙ্কার

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সংগৃহীত ছবি

তাওহিদ হৃদয়ের দুর্দান্ত ইনিংসের পরও নিশাঙ্কা-আসালাঙ্কার কাছে হেরে গেল বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের ৩ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতা নিশ্চিত করলো সফরকারী শ্রীলঙ্কা। আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রানে থামে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৯৬ রান করেন তাওহিদ হৃদয়। জবাবে ১৭ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের হয়ে সেঞ্চুরি করেন নিশাঙ্কা। আগামী সোমবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেই হবে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ।

২৮৭ রানের লক্ষ্যে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই লঙ্কান শিবিরে তোপ দাগালেন শরিফুল ইসলাম। আভিস্কাকে সৌম্যের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠান টাইগার এই পেসার। এতে ১ বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন লঙ্কান ওপেনার। এরপর বাংলাদেশের ওপর চড়াও হয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস। ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে এসেই কুশলকে ফেরালেন তাসকিন আহমেদ। ৩ চারে ১৩ বলে ১৬ রান করে ফিরেছেন মেন্ডিস।

দুই উইকেট হারিয়ে নিশাঙ্কার সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। কিন্তু এই জুটি বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শরিফুল। সামারাবিক্রমাকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান টাইগার এই পেসার। মিরাজের ক্যাচ হয়ে ৪ বলে ১ রান করে ফিরেছেন তিনি। ৩ উইকেট হারানোর চাপ থেকে শ্রীলঙ্কাকে টেনে তোলে নিশাঙ্কা-আসালাঙ্কা জুটি। নিশাঙ্কার সেঞ্চুরিতে দুজনে মিলে গড়েন রেকর্ড ১৮৫ রানের জুটি। বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটেও এখন পঞ্চম সর্বোচ্চ জুটি এটি শ্রীলঙ্কার।

রেকর্ড এই জুটি গড়ার পরই অবশেষে মিরাজে ব্রেকথ্রু পায় বাংলাদেশ। লিটনের ক্যাচ হয়ে ১১৩ বলে ১১৪ রান করে থামলেন নিশাঙ্কা। সঙ্গী হারিয়ে আসালাঙ্কাও সেঞ্চুরির পথে ছুটছিলেন। দলীয় ২৩৫ রানে আসালাঙ্কাকে ফেরান তাসকিন। আম্পায়ার আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেন শান্ত। এতে সফল হওয়ায় সেঞ্চুরি থেকে ৯ রান দূরে থামলেন আসালাঙ্কা। এর মধ্যে দিয়ে অষ্টম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট নিলেন তাসকিন।

এটি তার ৭২তম ম্যাচ। দলীয় ২৫১ রানে লিয়ানাগেকে ফেরান তানজিম। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি ১৬ বলে ৯ রান করা লিয়ানাগে। এরপর ভেল্লালাগে ও হাসারাঙ্গার ধীরগতির জুটিতে জয়ের খুব কাছে চলে যায় লঙ্কানরা। ১৬ বলে ২৫ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে সাজঘরে ফেরেন হাসারাঙ্গা। দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে নিশাঙ্কার হাতেই।

এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শূন্য রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডের মত দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ডাক মারেন লিটন দাস। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে দারুণ জুটি গড়েন নাজমুল হাসান শান্ত ও সৌম্য সরকার। শান্তকে বিদায় করে ৭৫ রানের এই জুটি ভেঙে দেন মাদুশঙ্কা। উইকেটের পেছনে কুশল মেন্ডিসের হাতে ধরা পড়ার আগে শান্ত করেন ৩৯ বলে ৪০ রান। সঙ্গী হারিয়েও একপাশে লড়ে যান সৌম্য, ব্যক্তিগত ফিফটি হাঁকিয়ে দলীয় শতক পূর্ণ করেন তিনি। ফিফটি ছোঁয়ার পর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২ হাজার রান পূর্ণ করেন সৌম্য সরকার।

তবে মাইলফলক ছোঁয়ার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সৌম্য। হাসারাঙ্গার বলে রিভার্স সুইপে মাদুশঙ্কার ক্যাচ হয়ে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য। ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৬৬ বলে ৬৮ রান করেছেন টাইগার এই ওপেনার। সৌম্যর বিদায়ের পর আরেকটি ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। উইকেটে এসেই ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ। দারুণ লড়াইয়ের পর দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর তাওহিদকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মুশফিক। তবে এই জুটি বেশি বড় হতে দেননি হাসারাঙ্গা। সুইপ করতে গিয়ে মিস করেন মুশফিক। আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউতে মুশফিককে ফেরায় শ্রীলঙ্কা। এতে ৪৩ রানে ভাঙে পঞ্চম উইকেট জুটি। ২৮ বলে ২৫ রান করে থামেন তিনি।

মিরাজকে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ শিকার করেছেন লঙ্কান এই স্পিনার। তার ঘূর্ণিতে ফেরার আগে ১৮ বলে ১২ রান করেন মিরাজ। এরপর তানজিম সাকিবকে নিয়ে লড়েছেন তাওহিদ। ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর বাংলাদেশের পুঁজি বাড়াতে উইকেটে লড়েছেন এই তরুণ ব্যাটার। ২৯ ম্যাচের ক্যারিয়ারে হৃদয়ে সপ্তম পঞ্চশ ছোঁয়া ইনিংস পেয়েছেন তিনি।

তাওহিদকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছিলেন তানজিম সাকিব। তবে দলীয় ২৩৬ রানে মাদুশানের শিকার হন তিনি। ফেরার আগে ৩৩ বলে ১৮ রান করেন তানজিম। এরপর তাসকিন এসেই আগ্রাসী খেলতে থাকে। তার চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি ও তাওহিদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ২৮৬ রানে থামে বাংলাদেশ। হৃদয় ১০২ বলে অপরাজিত থাকলেন ৯৬ রানে। তাসকিন খেলেছেন ১০ বলে ১৮ রানের ক্যামিও।

শেয়ার করুন