শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের প্রতিশোধ যেন ওয়ানডে সিরিজে নিলো বাংলাদেশ। শেষ ওয়ানডেতে হেসেখেলে হারিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিল টিম টাইগার। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে তানজিদ হাসান তামিমের ৮১ বলে ৮৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের পর রিশাদ হোসেনের ঝড়ে ৫৮ বল ও ৪ উইকেট হাতে রেখে জয় পায় বাংলাদেশ। এই জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।
আজ সোমবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৫৬ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। এরপরেই অর্ধশতক তুলে নিয়ে দলকে টেনে তুলেন সৌম্য সরকারের কনকাশন বদলি হয়ে ওপেনিংয়ে নামা তানজিম হাসান তামিম। তবে তামিম ৮৪ রানে ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১ রানে ফিরে গেলে আবারও বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
এরপর জুটি গড়ে দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তুলেন মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এই জুটির ৪৮ রানে ভর করে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৭৮ রানে মিরাজ ফিরে গেলেও রিশাদ হোসেনের ১৮ বলে ৪৮ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ভর করে ৪০ ওভার ২ বলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
আগের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি ব্যর্থ হলেও আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ওপেনিং জুটি ভালো শুরু এনে দেয়। সৌম্য সরকার আহত থাকায় তার কনকাশন বদলি হয়ে আজ ওপেনিংয়ে নামেন তানজিম হাসান তামিম আর তার সঙ্গে ছিলেন এনামুল হক বিজয়। শুরু থেকেই এই দুই ওপেনার দেখেশুনে খেলতে থাকেন। প্রথম আট ওভারে তুলে নেন ৫০ রান।
তবে এর পরের ওভারেই ঘটে ছন্দপতন। লাহিরু কুমারার বলে কাভার পয়েন্টে আভিস্কা ফার্নান্দোর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান এনামুল হক বিজয়। আউট হওয়ার আগে করেন ২২ বলে ১২ রান।
এনামুল হক বিজয়ের পর দলীয় ৫৬ রানে সাজঘরে ফিরে যান টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ৫ বলে মাত্র ১ রান করে লাহিরু কুমারার বলে উইকেটরক্ষক কুশর মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান শান্ত। তার বিদায়ে ৫৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
৫৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে জুটি গড়েন তানজিম হাসান তামিম। লঙ্কানদের বিপক্ষে আজ তিনি তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। ৫১ বলে অর্ধশতক তুলে নেন তিনি। তামিম-হৃদয় জুটিতে ভর করে ২০ ওভারে দলীয় শতক পেরোয় বাংলাদেশ।
কিন্তু দলীয় শতক তুলে নেওয়ার পরেই ভেঙে যায় এই জুটি। দলীয় ১০৫ রানে তাওহিদ হৃদয়ের বিদায়ে ৪৯ রানে ভাঙে এই জুটি। ৩৬ বলে ২২ রান করা হৃদয় লাহিরু কুমারার বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে প্রমোদ মাদুশানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান হৃদয়।
তাওহিদ হৃদয়ের পর লাহিরু কুমারার চতুর্থ শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। লাহিরু কুমারার হাতে উইকেটরক্ষক কুশাল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। তার বিদায়ে ১১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
দলের বিপদ আরও বাড়িযে সাজঘরে ফিরে যায় অর্ধশতক তুলে নেওয়া তানজিম হাসান তামিম। সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে থাকা তানজিম ৮১ বলে ৮৪ রান করে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে চারিথ আসালাঙ্কার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান সাজঘরে।
তামিমের বিদায়ের পর জুটি গড়েন মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এই জুটিতে ভর করে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে এই জুটির ৪৮ রানে ভর করে জয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছে।
দলীয় ১৭৮ রানে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার শিকার হয়ে মিরাজ সাজঘরে ফিরে গেলে ভেঙে যায় এই জুটি। মিরাজ ফিরে গেলে রিশাদ হোসেনকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মুশফিক। এই জুটিতে ভর করে ৩৭ ওভার ৩ বলে দলীয় ২০০ রান পূর্ণ করে বাংলাদেশ।
দলীয় ১৭৮ রানে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার শিকার হয়ে মিরাজ সাজঘরে ফিরে গেলে ভেঙে যায় এই জুটি। মিরাজ ফিরে গেলে রিশাদ হোসেনকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান মুশফিক। এই জুটিতে ভর করে ৩৭ ওভার ৩ বলে দলীয় ২০০ রান পূর্ণ করে বাংলাদেশ।
শেষের দিকে লঙ্কান বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালান রিশাদ হোসেন। রিশাদের ১৮ বলে ৪৮ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ভর করে ৪০ ওভার ২ বলে ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
এর আগে, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আজ প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে শ্রীলঙ্কা। লঙ্কা শিবিরে শুরুতেই জোড়া আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের পর উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ। যার ফলে ৪১ রানেই ৩ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। এরপর নিয়মিত বিরতীতে উইকেট হারানো লঙ্কানরা ১৫৪ রানেই হারায় ৭ উইকেট। এরপর অষ্টম উইকেটে মহেশ থিকশানাকে নিয়ে জুটি গড়েন জেনিথ লিয়ানাগে। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একপ্রান্ত আগলে রেখে তিনি আজ তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। তার শতকে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৩৫ রান তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৩৫/১০ (জানিথ লিয়ানাগে ১০১*, চারিথ আসালাঙ্কা ৩৭, কুশল মেন্ডিস ২৯; তাসকিন আহমেদ ৩/৪২, মোস্তাফিজুর রহমান ২/৩৯, মেহেদি হাসান মিরাজ ২/৩৮, রিশাদ হোসেন ১/৫১)
বাংলাদেশ: ৪০.২ ওভারে ২৩৭/৬ (তানজিদ হাসান তামিম ৮৪, তাওহিদ হৃদয় ২২, মেহেদী হাসান মিরাজ ২৫, মুশফিকুর রহিম ৩৭, রিশাদ হোসেন ৪৮; লাহিরু কুমারা ৪/৪৮)
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: রিশাদ হোসেন (বাংলাদেশ)।