ইফতার পার্টিতে গিয়েও আওয়ামী লীগের গিবত গায়: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেয়, দিতে জানে, আর সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। যারা প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাবে, উৎখাত করবে, নির্বাচন হতে দেবে না, মানুষ খুন করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে, এখন তারা কিন্তু কোনো মানুষকে ইফতার দেয় না, নিজেরা ইফতার পার্টি খায়। ইফতার পার্টিতে গিয়েও আল্লাহ-রাসুলের (সা.) নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়। নিজেরা ইফতার খায়, আওয়ামী লীগের গিবত গায়। আর কবে আওয়ামী লীগকে উৎখাত করবে সেটাই দেখে।

১৮ মার্চ (সোমবার) দুপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইফতার পার্টি করবো না, এই খাবার সাধারণ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেবো। সারাদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের মাঝে ইফতার বিলি করছেন।

‘আপনারা খেয়ে-দেয়ে মাইক একটা লাগিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎপাত করবেন। আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী, এদেশ স্বাধীন করেছে- সেটা অপরাধ? আওয়ামী লীগের অপরাধ কী, গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ায়? দেশটা আজ উন্নত করেছে সেটাই কি অপরাধ? তারা যে গণতন্ত্রের কথা বলে, আমরা কিন্তু গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি।’

সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর নিজেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতায় বসে, ক্ষমতার উৎকৃষ্ট বিলিয়ে যে দলের সৃষ্টি, কোন গণতান্ত্রিক ধারা দিয়ে সে দল তৈরি হয়েছে? এটা কোনো গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে হয়নি, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের হাত দিয়ে হয়েছে। তারা আবার গণতন্ত্রের ভাষা বোঝে? গণতন্ত্রের অর্থ বোঝে? গণতন্ত্র বানান করতে পারে? সেটাই আমার প্রশ্ন। আপনারা জিজ্ঞেস করেন গণতন্ত্র বানান করতে পারি কি না। সেটাও তারা বুঝবে না। তারা তোতাপাখির মতো বলে যাচ্ছে, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে। এদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্র দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গণতন্ত্র চর্চা করে আওয়ামী লীগ নিজের দলের ভেতরে এবং দেশেও। আজ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আছে বলেই কথা বলতে পারে।

তিনি বলেন, এই যে এতগুলো টেলিভিশন কে দিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার। গণতন্ত্রের কথা বলে তারা তো দেয় নাই, একটাই টেলিভিশন ছিল, একটাই রেডিও ছিল, তারা নিজেরাই ব্যবহার করতো। নামমাত্র কয়েকটা পত্রিকা ছিল। আর আজ হাজার হাজার পত্রিকা। প্রায় অর্ধশত টেলিভিশন, রেডিও আমাদের হয়ে গেছে। যার যার ইচ্ছামতো টকশো করছে কথা বলে যাচ্ছে। সব কথা বলে যদি বলে যে কথা বলতে পারি না, তাহলে কোথায় যাবো আমরা?

তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের দিন থেকে আওয়ামী লীগের ওপর যে অত্যাচার, যে নির্যাতন করছে, সে কথা মানুষ ভুলবে কী করে। জিয়াউর রহমানের দিন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার, তার আগে আইয়ুব খানের আমল থেকে নির্যাতন। এমনকি লিয়াকত আলীর সময়ও কেউ রেহাই পায়নি। আওয়ামী লীগের জন্মের পর থেকেই বারবার নির্যাতন। আজ দেশে মানুষ যদি কিছু পেয়ে থাকে তাহলে আওয়ামী লীগের হাত থেকেই পেয়েছে। স্বাধীনতা পেয়েছে, গণতন্ত্র পেয়েছে, গণতান্ত্রিক অধিকার পেয়েছে, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি যেখানে ডাল-ভাতের ওয়াদা করে ব্যর্থ হয়েছিল, এরপর একজন এসে আলু খেতে বললো, ভাতের পরিবর্তে আলু, আলু উৎপাদন সেভাবে করতে পারেনি। সেখানে আওয়ামী লীগের আমলে অন্তত ভাতের কষ্ট নাই। এটা আমরা বলতে পারি। এখন জিনিসের দাম নিয়ে মানুষ বলছে, মুরগির দাম বাড়লো কেন, পেঁয়াজের দাম বাড়লো কেন, চিনির দাম বাড়লো কেন, তেলের দাম বাড়লো কেন? একসময় দেশের মানুষ নুন-ভাতের কথায চিন্তা করতো। সেটুকু জোগাড় করতে পারতো না। সেই অবস্থা আওয়ামী লীগ পরিবর্তন করতে পেরেছে।

তিনি আরও বলেন, আজ খাদ্যশস্য, দানাদার শস্য আমরা চারগুণ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। আজ আমরা ইলিশ মাছের উৎপাদন আড়াইগুণ বৃদ্ধি করেছি, আমাদের গবাদিপশু সেটাও দুইগুণ বৃদ্ধি হয়েছে। মুরগি, পোল্ট্রি চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে দুধের উৎপাদন। প্রত্যেকটা জিনিসের উৎপাদন আমরা বৃদ্ধি করেছি। মাংসের দাম বেড়ে গেছে, তবে আটগুণ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশে।

শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন ঠেকাবে, ঠেকাতে পারেনি, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। ওদের ভোটের চেহারার কথা তো আমাদের মনে আছে। আমরাও তো সাধারণ মানুষকে ইফতার বিলি করি আর তোমরা ইফতার খাও, তোমরা খেতে জানো, তোমরা হচ্ছো খাই খাই। আর আওয়ামী লীগ দেয়। এটাই হচ্ছে তফাৎ। আমরা জনগণের সঙ্গে কাজ করি, জনগণের সঙ্গে কাজ করবো। আজ জাতির পিতা জন্ম নিয়েছেন বলে বাঙালি জাতি, জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আজ ওরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। কোন সাহসে চায়? ২০১৮ সালে নির্বাচনে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। তখন খালেদা জিয়াও সুস্থ, তারেক জিয়া মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে গিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে, এই রমরমা অবস্থায় আসন পেয়েছিল মাত্র ৩০টা। আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩৩টা। এটা তো মনে রাখা উচিত। তাহলে কীসের আশায় আবার তত্ত্বাবধায়ক চায়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, ডা. দীপু মণি, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।

শেয়ার করুন