আইপিএল : মুস্তাফিজ জাদুতে চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়ের জয়ে শুরু

মত ও পথ ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

শুক্রবার সন্ধ্যায় চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে সুরের জাদু আর নাচের তালে পর্দা উঠেছিল সপ্তদশ আইপিএলের। বলিউডের এক ঝাঁক তারকার পারফরম্যান্সের পর উদ্বোধনী ম্যাচ শুরু হতেই যেন সব আলো কেড়ে নিলেন এক পেসার।

অথচ একাদশেই যার জায়গা ছিল ঘোর অনিশ্চিত। মাথিশা পাথিরানার চোট সৌভাগ্য বয়ে আনল মুস্তাফিজের জন্য। চেন্নাইয়ের হয়ে অভিষেকেই অবিশ্বাস্য স্পেল টাইগার পেসারের।

universel cardiac hospital

নিজের প্রথম ১০ ডেলিভারিতেই একে একে তুলে নেন ৪ উইকেট। ফিজ তাণ্ডবের পর শেষ পর্যন্ত বড় স্কোর গড়া হয়নি কোহলিদের।

নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৩ রানে থামে আরসিবির ইনিংস। জবাবে খেলতে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে কে কাকে ছাড়াবেন যেন এমন প্রতিযোগিতায় নামলেন চেন্নাইয়ের ব্যাটাররা। যদিও বড় স্কোর গড়তে পারেননি কেউই।

তবে তাতে জয়ের পথে বাধা হতে পারেনি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়ের জন্য। ব্লকবাস্টার ম্যাচে ৮ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটের অনায়াস জয়ে আসরে শুভসূচনা পেল ধোনি-মুস্তাফিজরা।

উদ্বোধনী ম্যাচে চেন্নাইয়ের মাঠে টস জিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসি। উদ্বোধনী জুটিতে কোহলিকে সঙ্গে নিয়ে ঝড় তোলেন দক্ষিণ আফ্রিকান এই তারকা ব্যাটার। ইনিংসের শুরুতে বেঙ্গালুরু যখন উড়ন্ত শুরু করেছিল, তখন একটি ব্রেকথ্রুর অপেক্ষায় ছিল চেন্নাই। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আক্রমণে এসেই হলুদ শিবিরে প্রথম সেই আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দেন ফিজ। প্রথম ওভারে মাত্র ৪ রানে তিনি জোড়া শিকার ধরেন। আগ্রাসী ব্যাট করতে থাকা ফাফ ডু প্লেসিকে (২৩ বলে ৩৫ রান) দিয়ে শুরু, এরপর ওই ওভারের শেষ ডেলিভারিতে ফেরান রজত পাতিদারকে।

মাঝে আর ফিজকে বোলিংয়ে আনেননি মহেন্দ্র সিং ধোনি। চেন্নাইয়ের অধিনায়কত্ব ছাড়লেও যে মূল পরিকল্পনা তার সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মাঝে কেবল একটি উইকেট পতন হয়েছিল বেঙ্গালুরুর। পরবর্তী সময়ে দ্বাদশ ওভারে ফের আক্রমণে আসেন এই বাংলাদেশি পেসার। ওই ওভারের দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই তিনি ফিরিয়েছেন বেঙ্গালুরুর বড় ভরসা বিরাট কোহলিকে। ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় নিজের উইকেট ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি। বাউন্ডারি লাইনে বল ধরে রবীন্দ্র জাদেজার দিকে ছুঁড়ে দেন অজিঙ্কা রাহানে। রবীন্দ্র বল লুফে নিতেই শেষ হয় কোহলির ইনিংস। ফেরার আগে তিনি ২০ বলে ২১ রান করেন।

দুই বল পর আবারও ফিজের ঝলক। এবার দারুণ স্লোয়ারে বোকা বানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিনকে। ২২ বলে ১৮ রান করা এই তারকাকে ফিজ বোল্ড করে ফেরান। নিজের তৃতীয় ওভারে মুস্তাফিজ উইকেটশূন্য থেকে দেন ৬ রান। তবে শেষ ওভারে বেঙ্গালুরুকে বড় পুঁজি এনে দেওয়া কার্তিক-রাওয়াতের কাছে ছাড় পাননি ফিজও। সেই ওভারে তিনি খরচ করেন ১৭ রান। ফিজ ছাড়া অন্য কেউ চেন্নাইকে সেভাবে পথ দেখাতে পারেননি। ফলে কার্তিক-রাওয়াত মিলে মাঝের বিপর্যয় সামলে কোহলি-ডু প্লেসিদের দলকে এনে দিয়েছিলেন ১৭৩ রানের লড়াকু পুঁজি।

জবাবে রান তাড়ায় আগ্রাসী ব্যাটিং উপহার দেয় চেন্নাইও। ডেভন কনওয়ে না থাকায় রুতুরাজের সঙ্গে ওপেন করতে নামে আরেক কিউই ব্যাটার রাচিন রবীন্দ্র। আইপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচেই নজর কাড়লেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। দ্রুত রান তুলছিলেন চেন্নাইয়ের দুই ওপেনার। চেন্নাইকে প্রথম ধাক্কা দেন বেঙ্গালুরুর ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার যশ দয়াল। ১৫ রানের মাথায় রুতুরাজকে ফেরান তিনি। রবীন্দ্র বড় শট খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অবশেষে কর্ণ শর্মার বলে আউট হন তিনি। ১৫ বলে ৩৭ রান করেন কিউই এই ওপেনার।

উইকেট হারালেও চেন্নাইয়ের রান তোলার গতি কমেনি। রাহানে ও ড্যারিল মিচেল দু’জনেই শুরু থেকে হাত খুলে খেলছিলেন। অন্যদিকে হাল ছাড়েনি বেঙ্গালুরু। তাদের ম্যাচে ফেরান গ্রিন। প্রথমে ২৭ রানের মাথায় রাহানে ও তার পরে ২২ রানের মাথায় মিচেলকে ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন। চেন্নাইকে জেতানোর দায়িত্ব গিয়ে পড়ে রবীন্দ্র জাদেজা ও ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নামা শিবাম দুবের কাঁধে। দুজনে অপরাজিত থেকেই দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন।

মুস্তাফিজে মুগ্ধ ক্রিকেট দুনিয়া

এ যেন ধ্বংসস্তুপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে আসা। কে বলবে, এই মুস্তাফিজই চলতি মাসেই বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে ছিলেন না। সিরিজের শেষ ওয়ানডেও খেলেছেন আরেক পেসার তানজিম হাসান সাকিবের ইনজুরির কারণে। কিন্তু, আইপিএলে চেন্নাইয়ের জার্সিতে মনোমুগ্ধকর এক শুরু হলো বাংলাদেশি এই পেসারের।

৪ ওভারে ২৯ রান। সঙ্গে ৪ উইকেট। সেই চার উইকেটের মাঝে আছে বিরাট কোহলি, ফাফ ডু প্লেসিস, ক্যামেরন গ্রিনের মত তারকার নাম। আছে রজত পতিদারের মতো উদীয়মান তারকাও। ম্যাচশেষে ফিজ পেয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ এবং ফ্যান্টাসি প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার।

সেই সঙ্গে মুস্তাফিজে মুগ্ধ গোটা ক্রিকেট দুনিয়া। ম্যাচশেষে চেন্নাইয়ের অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড় সরাসরিই উল্লেখ করেছেন মুস্তাফিজের কথা, ‘শুরুর ২-৩ ওভার এলোমেলো হলেও পরে খেলা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসে। বিশেষ করে মুস্তাফিজের ওভার থেকে আমরা দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। সত্য বলতে তার হাত ধরেই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট এসেছে।’

নিজেদের বোলিং বিভাগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ম্যাক্সওয়েল ও ফাফ ডু প্লেসি (উইকেট নেন মুস্তাফিজ) আউট হওয়াতে আমরা স্বস্তি পাই। সেটিতে পরের পাঁচ-ছয় ওভার আমরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে পেয়েছি।’

মুস্তাফিজের বোলিং দেখে তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন দুই সাবেক ভারতীয় অনিল কুম্বলে এবং রবিন উথাপ্পা। ভারতের বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি অলরাউন্ডার ইরফান পাঠান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘চেন্নাইয়ের উইকেটে মুস্তাফিজের বোলিং বৈচিত্র্য বেশ লোভনীয়। তার কাছ থেকে সেরা বোলিং দেখা গেল।’

এমনকি টুইটার ট্রেন্ডিংয়েও উঠে এসেছে মুস্তাফিজের নাম। তার এমন পারফরম্যান্স অন্যসব বাংলাদেশির মতো স্পর্শ করেছে দেশের তারকা ক্রিকেটারদের মধ্যেও।

তামিম ইকবাল সামাজিক মাধ্যমে মুস্তাফিজের সঙ্গে আগুনের ডানার একটি ছবি দিয়ে লেখেন, ‘দুর্দান্ত শুরু হলো মুস্তাফিজের!’ মুশফিকুর রহিম লিখেছেন, ‘মাশাআল্লাহ ভাই…অভিনন্দন…টুর্নামেন্টের বাকি সময়ের জন্য শুভকামনা রইল ‘। তাসকিন আহমেদ দুটি পুরস্কারের কথা উল্ল্যেখ করে লিখেছেন, ‘সাফল্যের মুকুটে আরও পালক যুক্ত হোক। অভিনন্দন ফিজ।’

শেয়ার করুন