‘জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করতে হবে পরিকল্পিতভাবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৭১ সালের জেনোসাইডের অজস্র প্রমাণ এখনো আছে। কিন্তু সেগুলো যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে। জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে পরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এখানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

‘বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১ এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী বৃহত্তম গণহত্যার ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্বের নীরবতা’ শীর্ষক এক সেমিনার বক্তারা এসব কথা বলেন। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম–মুক্তিযুদ্ধ ৭১ জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ শনিবার ওই সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, জেনোসাইডের অপরাধ কখনো তামাদি হয় না। এটা কেউ ক্ষমাও করতে পারে না। ১৯৭১ সালে যে জেনোসাইড হয়েছে তার অজস্র প্রমাণ ও তথ্য রয়েছে। অনেক ‘টেস্টিমনি’ আছে। এখানে ঘাটতির জায়গা হলো যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব উপস্থাপন করা। এগুলো ইংরেজি বা আন্তর্জাতিক ভাষায় অনুবাদ করতে হবে। জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখনো অনেক দূর। সে জায়গায় সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব বলেন, জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া গেলে ইতিহাসের সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। পাকিস্তান ও দেশটির সেনাবাহিনী জেনোসাইডের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবে। বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইবে। তিনি বলেন, জেনোসাইডকে বাংলায় ‘গণহত্যা’ বলা হয়। কিন্তু এটি বলা হলে আংশিক বিষয়টা আসে। জেনোসাইডের ভালো বাংলা প্রতিশব্দ উদ্ভব না হওয়া পর্যন্ত তিনি জেনোসাইড শব্দটি ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। তিনি জেনোসাইড অস্বীকারকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে ‘জেনোসাইড ডিনায়াল অ্যাক্ট’ করার প্রস্তাব করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক হাফিজুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালের জেনোসাইডের স্বীকৃতি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব একেবারে নীরব, তা নয়। বেশ কিছু স্বীকৃতি এসেছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য একটি পথনকশা প্রয়োজন। তারপর ধাপে ধাপে এগোতে হবে। পরিকল্পিতভাবে এগোলে ১০-১৫ বছরের মধ্যে স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

হাফিজুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও জেনোসাইড নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো বিক্ষিপ্তভাবে। সব কটি আবার মানসম্মত নয়। ভালো মানের বইগুলোও ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়নি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেটার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের পরিচালক (গবেষণা) সঞ্জীব হোসেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাঙালিদের ওপর যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে, তা কেন আন্তর্জাতিক আইনে জেনেসাইড— সেটা ব্যাখ্যা করে স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও ভালো একটি জার্নালে নিবন্ধ লেখা হয়নি। এটি দুঃখজনক ও লজ্জার। তিনি বলেন, জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া কঠিন ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু তা অসম্ভব নয়। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যাওয়ার আগে সরকারকে এমন একটি নীতি প্রকাশ করার পরামর্শ দেন যেটি ১৯৭১ সালের জেনোসাইডকে প্রমাণ করবে।

একুশ শতকে এসে বিশ্ববাসী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডকে স্বীকৃতি দেবে—এমন আশা ব্যক্ত করে সঞ্জীব হোসেন বলেন, এ জন্য আগে বুঝতে হবে কেন এত দিনেও এই স্বীকৃতি অর্জন করা যায়নি এবং সে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্য দেন ফোরামের সহসভাপতি ম. হামিদ। সাবেক রাষ্ট্রদূত কামালউদ্দিনের সঞ্চালনায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ, প্রজন্ম একাত্তরের সভাপতি আসিফ মূনীর, আমরা একাত্তরের সভাপতি মাহবুব জামান প্রমুখ সেমিনারে বক্তব্য দেন।

শেয়ার করুন