টংক আন্দোলনের নেত্রী কুমুদিনী হাজং মারা গেছেন

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

ব্রিটিশ শাসনামলে ঐতিহাসিক টংক আন্দোলন ও হাজং বিদ্রোহের নেতা কুমুদিনী হাজং মারা গেছেন। আজ শনিবার দুপুরে নিজ বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর সীমান্তে বহেরাতলীতে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। কুমুদিনীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁর স্বজন বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক গীতিকার সুজন হাজং।

সুজন হাজং জানান, বেলা ১টা ৪০ মিনিটে কুমুদিনী হাজং নিজ বাড়িতে মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ১০২ বছর। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন। কুমুদিনী হাজং দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। নিজ বাড়িতে তিনি মেজ ছেলে অর্জুন হাজং ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজনেরা আসার পর রোববার সকালে সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর ঘাটে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্নের কথা রয়েছে।

universel cardiac hospital

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমুদিনী হাজংয়ে স্বামী লংকেশ্বর হাজং ছিলেন টংক আন্দোলন অন্যতম নেতা। ব্রিটিশ পুলিশেরা লংকেশ্বর হাজংকে খুঁজে না পেয়ে কুমুদিনী হাজংকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। এই খবর পেয়ে টংক আন্দোলন নেত্রী রাসিমণি হাজং গিয়ে বাধা দেন এবং এক পুলিশকে কুপিয়ে মেরে ফেলেন। পরে পুলিশের গুলিতে রাসিমণি শহীদ হলেন। সেখান থেকেই আরও জোরদার হয় টংক আন্দোলন।

কুমুদিনী হাজংয়ে মৃত্যুতে শোক জানিয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের সুসং জমিদারি এলাকায় টংক প্রথার প্রচলন ছিল। ফসল হোক বা না হোক, নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান খাজনা হিসেবে জমিদারকে দিতে হবে। ১৯৩৭ সালে শোষিত কৃষকেরা এ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন, যা টংক আন্দোলন নামে পরিচিত। টংক আন্দোলনের অন্যান্য নেতাদের মতো কুমুদিনী হাজং একজন কিংবদন্তী নারী নেত্রী। সমাজে তাঁর অবদানের কথা ভোলার নয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে কুমুদিনীর স্বামী লংকেশ্বর হাজং মারা যান। তাঁদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে লমিন হাজং আগেই মারা গেছেন। মেজ ছেলে অর্জুন হাজং নিজ গ্রামে। ছোট ছেলে সহদেব হাজং মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতে চলে যান। বড় মেয়ে মেনজুলি হাজং মানিকগঞ্জে ও ছোট মেয়ে অঞ্জুলী হাজং থাকেন ঢাকায়।

সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০১৯ সালে কুমুদিনী হাজংকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। এ ছাড়া তাঁকে অনন্যা শীর্ষদশ (২০০৩), আহমদ শরীফ স্মারক (২০০৫), কমরেড মণি সিংহ স্মৃতি পদক (২০০৭), সিধু-কানহু-ফুলমণি পদক (২০১০), জলসিঁড়ি (২০১৪) ও হাজং জাতীয় পুরস্কার (২০১৮) প্রদান করা হয়।

বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক সুজন হাজং বলেন, কুমুদিনী হাজংয়ে অবদানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন ছিল। তাঁকে জীবদশায় একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক দেওয়া যেত। তবে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার না পেলেও তিনি অগণিত মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পেয়েছেন। তাঁর ত্যাগ ও সংগ্রামী চেতনার কাছে আমরা হাজং সম্প্রদায় মাথা নত করি।

শেয়ার করুন