ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচনের ঠিক আগে দিল্লির এই সিদ্ধান্ত এল, যা অনেককে অবাক করেছে। তবে ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বের অনেক দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ। গত ডিসেম্বরে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, যার মেয়াদ ছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের ব্যবসায়ীরা আশা করছিলেন যে রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বরং দ্রুত তুলে নেওয়া হবে, কারণ রপ্তানি বন্ধ করার পর স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে নতুন উৎপাদিত পেঁয়াজও বাজারে এসেছে।
তবে শুক্রবার দিন শেষে সরকার এক আদেশ জারি করে বলেছে যে রপ্তানির ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
মুম্বাইভিত্তিক এক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের একজন নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অবাক করার মতো এবং এর কোনো দরকার ছিল না। কারণ, চলতি মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসার কারণে সরবরাহ বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে দামও কমে আসছে।
ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় মহারাষ্ট্রে। মুম্বাইয়ের ওই রপ্তানিকারক জানান, ওই রাজ্যের কিছু পাইকারি বাজারে প্রতি ১০০ কেজি পেঁয়াজের দাম ১ হাজার ২০০ রুপিতে নেমে এসেছে। গত ডিসেম্বরে এই দাম ছিল ৪ হাজার ৫০০ রুপি।
ভারতে আগামী মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাত সপ্তাহ ধরে এই নির্বাচন চলবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ভোটের মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হতে চাইছেন।
বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করে। দিল্লি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর এই সব দেশের কয়েকটিতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।
মুম্বাইভিত্তিক আরেকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের আরেকজন নির্বাহী রয়টার্সকে বলেন, ভারতের এই পদক্ষেপের কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক রপ্তানিকারক দাম বাড়িয়ে দেবে, কারণ আমদানিকারকদের হাতে খুব বেশি বিকল্প নেই।
চীন ও মিসরের মতো দেশও পেঁয়াজ রপ্তানি করে। তবে ভারতের সুবিধা হলো তারা পেঁয়াজ আমদানিকারকদের কাছে পৌঁছে দিতে খুব কম সময় নেয়। ব্যবসায়ীদের ধারণা, এশিয়ার দেশগুলো প্রতিবছর যত পেঁয়াজ আমদানি করে, তার অর্ধেকের বেশি আসে ভারত থেকে।
গত অর্থবছরে ভারত ২৫ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তারি করেছিল। এটা ছিল ভারতের জন্য একটি রেকর্ড। পয়লা এপ্রিল শুরু হয়ে ভারতীয় অর্থবছর শেষ হয় ৩১ মার্চ।