রাশিয়াকে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পঞ্চম দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি ভয়াবহ এক ঘটনার মুখোমুখি হলেন। মস্কোয় ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেন তিনি। খবর সিএনএনের।
মস্কোর কাছে বিশাল ক্রোকাস সিটি হল কনসার্ট ভেন্যু এবং শপিং কমপ্লেক্সে ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘ইসলামিক স্টেট খোরাসান’ বা আইএসকে। এ হামলায় নিহত হয়েছেন ১৩৩ জন। আহত হয়েছেন ১০০ জনের বেশি।
রুশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে হামলায় অংশ নেওয়া চার অস্ত্রধারীও রয়েছেন। সন্দেহভাজন চারজনকে ইউক্রেন সীমান্তের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুতিন অভিযোগ করেছেন, ওই চারজন ইউক্রেনে পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে এই হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে কিয়েভ। কিয়েভের কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেনে হামলা বাড়াতে একে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে মস্কো। এদিকে আরও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় রাশিয়াজুড়ে প্রধান পরিবহনকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাবলিক কনসার্ট এবং ক্রীড়া অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।
কিন্তু স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার যে আশায় রুশ নাগরিকেরা ভোট দিয়ে পুতিনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছেন, তার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। দীর্ঘদিন ধরেই পুতিনকে বিশাল ও অশান্ত দেশটিকে শৃঙ্খলার নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম একজন নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু পুতিনের গত ২৪ বছরের শাসনামলের মধ্যে এখন রাশিয়াকে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ ও অস্থির মনে হচ্ছে।
ইউক্রেনে ক্রেমলিনের নিষ্ঠুর যুদ্ধ তিন বছরে পড়েছে। এতে রাশিয়ানদের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা হয় না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার তিন লাখ সেনা হতাহত হয়েছেন।
গত বছর যেসব সেনা যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়েছে, তাদের এখনো ফিরিয়ে আনা হয়নি। উদ্বেগে থাকা স্বজনেরা এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় রুশ নাগরিকদের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধে পাঠানোর জন্য সেনা সমাবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এদিকে ক্রেমলিন কর্মকর্তাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে ক্রমাগত ইউক্রেনের ড্রোন হামলা ও সীমান্ত এলাকায় ইউক্রেনভিত্তিক সশস্ত্র সেনাদের হামলা।
ইউক্রেনের সঙ্গে লড়াইয়ে রুশ বাহিনী নতুন করে উদ্যোগী হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে রুশ কমান্ডারের দুর্বলতা ও অস্ত্রশস্ত্রের দক্ষতা অস্থিতিশীলতার একটি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত স্রোতকে উসকে দিয়েছে।
গত বছর পুতিনের ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী বাহিনী ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের বিদ্রোহ ও হাইকমান্ডের পদত্যাগ দাবিও ছিল ধাক্কা দেওয়ার মতো। ক্রেমলিন কর্তৃপক্ষের কাছে তা অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা যায়। প্রিগোশিনের রহস্যজনক মৃত্যুতে অবশ্য সে হুমকি চিরতরে দূর হলেও অন্য অসন্তুষ্ট কট্টরপন্থীদের আবির্ভাব দেখা গেছে।
একইভাবে রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যুও ক্রেমলিনের সমালোচনা চিরতরে থামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু মস্কোয় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সমবেত হাজারো মানুষ ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শেষ দিন ‘মিডডে এগেইনস্ট পুতিন’ বিক্ষোভ আয়োজনকারীরা তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।