জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন ও কতিপয় মুক্তিযোদ্ধার নেতৃত্ব দিয়েছেন কিন্তু তিনি মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শের অনুসারী ছিলেন না বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
মঙ্গলবার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হল রুমে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন ।
মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্র, একটি শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা । জিয়াউর রহমান নিজে এর একটিও অনুসরণ করেননি।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বড় সাফল্য ছিল সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। তার আগে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ অনেকেই বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাদের কেউই সফল হননি। বঙ্গবন্ধু এ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছেন বলেই আমাদের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছে।
মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু আরো আগে থেকেই দেখেছেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর সবাই বুঝতে পারে যে পাকিস্তানের সাথে বাঙালির কোন ভবিষ্যৎ নেই। পূর্ব পাকিস্তান হয়ে থাকলে বাঙালি কোনদিন আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পাবে না। দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে না। এই বাস্তবতা থেকেই ভাষা আন্দোলন, ৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৬ শাসনতন্ত্র, ছেষট্টির ছয় দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এককভাবে এই সকল আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত এবং জাতির প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা দেশের স্বাধীনতাকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন মাত্র তিন বছর। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের রিজার্ভ শূন্য ছিল, দেশের অবকাঠামো ছিল একেবারেই নাজুক অবস্থায়। নিজস্ব কোন মুদ্রা ছিল না। অথচ মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে তিনি দেশের সকল সেক্টরে যে সংস্কার সাধন করতে সক্ষম হয়েছিলেন তা সত্যিই অকল্পনীয়। নিখাদ দেশপ্রেম ছিল বলেই তিনি তা করতে পেরেছিলেন।
জাপান, জার্মানি, উত্তর কোরিয়া ও ভিয়েতনামের উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন জার্মানি, জাপান ও উত্তর কোরিয়ায় এখনো মিত্রবাহিনীর সৈন্য রয়েছে। ভিয়েতনামে চীনের সেনাবাহিনীর অবস্থান ছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ভারত সরকার সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে। তিনি যে জাতীয় স্বার্থে কখনো আপোস করেননি এটা তার আরো একটি বড় উদাহরণ।
মন্ত্রী রাজউক কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে জনস্বার্থে প্রত্যেকটি কাজ করার আহ্বান জানান। তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি আদর্শ জাতি গঠনের জন্য তিনি তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো: আনিসুর রহমান মিয়া বিপিএএ ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তৎপরতা বৃদ্ধি ও তথ্য উপাত্ত সরবরাহের আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ নবীরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।
রাজউক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনিসুর রহমান মিয়ার সভাপতিত্ব আয়োজিত এ আলোচনা সভায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।