বছর দশেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ভ্রমণে এসেছিল রোজারিও পরিবার। স্বপ্ন পূরণে স্থায়ীভাবে থাকতে চেয়েছিল আমেরিকায়। সে জন্য আবেদনও করেছিল। বছর দুয়েক আগে তাদের গ্রিনকার্ড অনুমোদন হয়। সাধারণত অনুমোদন হওয়ার দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যেই স্থায়ীভাবে বসবাসের এই কার্ড নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাতে পৌঁছে যায়।
আর দু-এক মাসের মধ্যেই উইন রোজারিও পেয়ে যেত স্বপ্নের গ্রিনকার্ড। তাঁর স্বপ্ন ছিল গ্রিনকার্ড পেলে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে যোগ দেবেন। কিন্তু তার আগেই পুলিশের গুলিতে প্রাণ গেল উইনের। ধরে দেখা হলো না কাঙ্ক্ষিত গ্রিনকার্ড, আর অপূর্ণই থেকে গেল নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন।
স্থানীয় সময় বুধবার নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় নিজ বাসায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১৯ বছরের উইন। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ওই তরুণ পুলিশ সদস্যদের দিকে এক জোড়া কাঁচি নিয়ে তেড়ে গেলে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল।
ছেলে হারানোর শোকে ভালো করে কথাও বলতে পারছেন না বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও। বাকরূদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ছেলে আমার নিউইয়র্কের জন এডাম স্কুল থেকে থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছিল। তাকে নিয়ে আমাদের কত স্বপ্ন ছিল!’
ফ্রান্সিস রোজারিও বলেন, মানসিক সমস্যার কারণে দুইবার জ্যামাইকা হসপিটালে ভর্তি হয়েছিল উইন। এ সমস্যার জন্যই আমাদের কাছে বেশি আদরের ছিল সে। আর সে ছেলেই হারিয়ে গেল মায়ের কোলে গুলিবিদ্ধ হয়ে।
উইনের ছোট ভাই উৎস রোজারিও বলেন, পুলিশ গুলি ছোড়ার আগে পুরোটা সময় তার মা ভাইকে জাপটে ধরে রেখেছিলেন। এমনকি ভাইকে ধরে রাখা অবস্থায়ই গুলি ছোড়ে পুলিশ। এই গুলি ছোড়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
মর্মন্তুদ ঘটনার সাক্ষী মা ইভা ডি কস্টার আর্তনাদ যেন থামার নয়। ক্রমাগত কেঁদেই চলেছেন ছেলের কথা বলতে বলতে। বাঙালি কমিউনিটির আইনি পরামর্শকেরা এসেছেন তাঁদের সান্ত্বনা দিতে এবং মামলার বিষয়ে পরামর্শ করতে। কমিউনিটির নেতাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সিস রোজারিও।
রোজারিও পরিবারর সঙ্গে দেখা করতে যান আইনজীবী মঈন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পরিবারের অনুমতি নিয়ে আমরা পুলিশের কার্যক্রম তদন্ত করছি। তাদের কোনো ত্রুটি থাকলে আমরা নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে শিগগির মামলা করব।’
নিহত উইনের দূর সম্পর্কের আত্মীয় সুখেন জোসেফ গোমেজ। তিনি বলেন, উইনের মায়ের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জ আর বাবার বাড়ি পুবাইলে। আমার মা এবং উইনের মা বাংলাদেশ থেকেই পরিচিত। এ ছাড়া রোজারিও পরিবারের সঙ্গে অন্য কারও খুব একটা যোগাযোগ ছিল না।’
সুখেন বলেন, রোজারিও পরিবার এখানে আসার পর গুটিকয়েক পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে খুব একটা দেখা যেত না। তাঁদের বাসায় যতবার গিয়েছি, উইনকে দেখেছি পড়ালেখা এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে।
উইনের ভাই উৎস রোজারিও বলেন, ‘ভাই ছিলেন খুবই অন্তর্মুখী স্বভাবের। খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন সবসময়। আমেরিকার মেরিনে (নৌবাহিনী) যোগ দেওয়ার স্বপ্ন ছাড়াও তাঁর ইচ্ছা ছিল বড় অ্যাথলেট হওয়ার। বাসায় চর্চাও করতেন। খুব একটা বন্ধুবান্ধব ছিল না তাঁর। আমিই ছিলাম তাঁর বন্ধু।’