সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবার ধাপে ধাপে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছে। প্রথম দুই ধাপে ছয় বিভাগের ৪০ জেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) শেষ ধাপে পরীক্ষা হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগের ২৪ জেলার ৪১৪টি কেন্দ্রে। এতে অংশ নিতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছেন।
আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা হবে। প্রার্থীকে অবশ্যই রঙিন প্রিন্ট করা প্রবেশপত্র নিয়ে কেন্দ্রে আসতে হবে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৮ জুন তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ ধাপে আবেদন করেন দুই বিভাগের তিন লাখ ৪৯ হাজার ৪৩৮ জন চাকরিপ্রার্থী।
দেড় ঘণ্টা আগে প্রার্থীকে কেন্দ্রে যেতে হবে
সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হবে কেন্দ্রের সব প্রবেশপথ তালাবদ্ধ করে। এজন্য পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা আগে প্রার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র অবশ্যই সঙ্গে আনতে হবে।
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে সতর্কীকরণ ঘণ্টা বাজিয়ে কেন্দ্রের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে তালাবদ্ধ করা হবে। এরপর কোনো প্রার্থীকে প্রবেশ বা বের হতে দেওয়া হবে না। দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বা বের হতেও দেওয়া হবে না।
কেন্দ্রে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো বই, উত্তরপত্র, নোট বা অন্য কোনো কাগজপত্র, ক্যালকুলেটর, মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্স, হাতঘড়ি বা ঘড়িজাতীয় বস্তু, ইলেকট্রনিক হাতঘড়ি বা যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কমিউনিকেটিভ ডিভাইস বা এজাতীয় বস্তু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করা বা সঙ্গে রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোনো পরীক্ষার্থী এসব দ্রব্য সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক তাকে বহিষ্কারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরীক্ষার কক্ষে নিজ আসনে কান খোলা রেখে বসতে হবে প্রার্থীদের। কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। তা নিশ্চিত করতে পরীক্ষা কেন্দ্রের ফটকে প্রার্থীদের দেহ তল্লাশি করা হবে। নারী প্রার্থীদের নারী পুলিশ ও পুরুষ প্রার্থীদের পুরুষ পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি করবেন। প্রার্থীর কাছে কোনো ডিভাইস আছে কি না, তা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে শনাক্ত করা হবে।
জালিয়াতিমুক্ত পরীক্ষায় চান প্রার্থীরা
এদিকে, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতিমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন প্রার্থীরা। গাজীপুরের প্রার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, প্রথম ধাপের পরীক্ষার চেয়ে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষাটা ভালো হয়েছিল। অনিয়ম-জালিয়াতির অভিযোগ কম ছিল। আশা করি, তৃতীয় ধাপে কর্তৃপক্ষ আরও ভালো পরীক্ষার আয়োজন করবে, যাতে মেধাবীরা নির্বাচিত হন।
তার মতো আরও অনেকে একই দাবি জানিয়েছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে পোস্টও দিয়েছেন। সিদরাতুল মুনতাহা নামে এক প্রার্থী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রস্তুতি বেশ ভালোই নিলাম। এবার পরীক্ষাটা সুষ্ঠু হলে হয়! ডিভাইস পার্টি, স্বজনপ্রীতি না হলে ইনশাআল্লাহ এবার পরীক্ষায় টিকবো।’
পরীক্ষায় শতভাগ জালিয়াতি ও অনিয়মমুক্ত হবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুই ধাপেই আমরা সুষ্ঠু পরীক্ষা নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। প্রথম ধাপে কোথাও কোথাও প্রতারকচক্র অপচেষ্টা চালিয়েছিল। তাদের রুখে দেওয়া হয়েছিল।’
শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় অপকর্ম করার আগেই তাদের গ্রেফতার করা হয়। এতে দ্বিতীয় ধাপে কেউ আর অনিয়ম করার সাহস দেখায়নি। আশা করি, তৃতীয় ধাপেও এ ধরনের অনিয়ম-জালিয়াতি হবে না।’
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর শিক্ষক নিয়োগে প্রথম ধাপের রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম-জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে আন্দোলনে নামে প্রার্থীরা। উচ্চ আদালতে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে রিটও করেন কিছু শিক্ষার্থীরা। তবে দ্বিতীয় ধাপে রাজশাহী, খুলনা ও ময়মনসিংহে তুলনামূলক সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
জালিয়াতি-প্রতারণা এড়াতে তৎপর প্রশাসন
দেশে সরকারি চাকরির সবচেয়ে বড় এ পরীক্ষা ঘিরে প্রতারণা ও জালিয়াতি ঠেকাতে প্রার্থীদের সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই চাকরি হবে। অর্থ লেনদেন বা অন্য কোনো অনৈতিক উপায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এতে আরও বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম নিয়োগ বিধিবিধান অনুসরণ করে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়। প্রার্থীদের রোল নম্বর, আসনবিন্যাস, প্রশ্নপত্র পাঠানো ও মুদ্রণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল প্রস্তুতসহ যাবতীয় কাজ সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা হয়।
এছাড়া জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় পরীক্ষাকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার রয়েছে। কোনো ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। এমতাবস্থায়, দালাল বা প্রতারকচক্রের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে কোনো ধরনের অর্থ লেনদেন না করা এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে কোনো প্রকার অসদুপায় অবলম্বনের জন্য কোনো দালালচক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করাসহ অনুরোধ করা হলো।
অর্থ লেনদেন বা অন্য কোনো অনৈতিক উপায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলেও উল্লেখ করেছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি হবে। কেউ অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখালে তাকে নিকটবর্তী থানায় সোপর্দ করা অথবা থানা বা গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করেছে অধিদপ্তর।