সিলেটে তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি আব্দুস সালামকে বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি। রোববার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের জরুরি সভায় তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ধর্ষণের অভিযোগে গত শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী তরুণীর মা। মামলায় আব্দুস সালামকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও তার সহযোগী নগরীর লালাদিঘির পার এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে আব্দুল মনাফ (৩৮), ঘাসিটুলা মতিন মিয়ার কলোনীর বাসিন্দা রেখা বেগম (৩০) এবং আরও দুই-তিনজনকে অজ্ঞাতনামা করে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনায় রোববার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতির দায়িত্ব থেকে আব্দুস সালামকে বহিষ্কার করা হয়। একইসঙ্গে ওই ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু বলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি আব্দুস সালামকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে ওই ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী নগরীর শেখঘাটের একটি বোতল ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। পরিবারের সদস্যরা ওই তরুণীকে সিলেট শহরের বাসায় রেখে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান। এই সুযোগে একই কলোনির বাসিন্দা রেখা বেগম লালদিঘীরপাড়ের আব্দুস সালামের সঙ্গে তরুণীকে পরিচয় করিয়ে দেন। আবদুস সালাম ‘ভালো কাজ’ দেওয়ার প্রলোভন দেখান তাকে। গত ৭ জানুয়ারি রেখা বেগম ভালো কাজের কথা বলে তরুণীকে আব্দুস সালামের লালদিঘীরপাড়স্থ বাসায় নিয়ে যান। পরে বাসার একটি রুমে ২২ দিন আটকে রেখে আব্দুস সালাম তাকে ধর্ষণ করেন।
পরিবারের সদস্যরা সিলেট নগরীর বাসায় ফিরে তরুণীকে না পেয়ে সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। কোথাও না পেয়ে থানায় জিডি করতে চাইলে রেখা বেগম বাধা দিয়ে তাদেরকে আবদুস সালামের কাছে নিয়ে যান। আব্দুস সালাম তরুণীকে উদ্ধারের ব্যাপারে আশ্বাস দেন। কয়েকদিন পর পরিবারের সদস্যরা আবারও আব্দুস সালামের কাছে গেলে তিনি জানান লন্ডন প্রবাসী একটি পরিবারের কাছ থেকে তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময় লন্ডন প্রবাসী পরিবারের পরিচয় জানতে চাইলে আব্দুস সালাম ক্ষেপে যান। এ সময় নির্যাতিতা তরুণী ধর্ষণের ঘটনা খুলে বললে তিনি প্রাণনাশের হুমকি ও তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, এ ঘটনার ৩ দিন পর আব্দুস সালাম বিয়ের কথা বলে ওই তরুণীকে তুলে নিয়ে যান। পরে তার সহযোগী আব্দুল মনাফের মাধ্যমে তাকে হবিগঞ্জে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে আটকে রেখে তাকে আব্দুস সালাম ও আব্দুল মনাফসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন ধর্ষণ করেন। সেখান থেকে গত ২৬ মার্চ এক আত্মীয়ের মাধ্যমে কৌশলে তরুণীকে উদ্ধার করে আনা হয়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ভিকটিম অভিযোগ দাখিলের দিনই মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।