বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ২০১৯ সালের বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। উচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
সোমবার (১ এপ্রিল) রাতে মত ও পথ-এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি বাংলাদেশের শেকড়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটিকে একটি সামাজিক আন্দোলনও বলা যেতে পারে। ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত পর ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগের গোড়াপত্তন ঘটে। তখন থেকেই ছাত্ররা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন রচনা করে। সেসময় তারা বাঙালির ভাষা ও তার সংস্কৃতিকে রক্ষা করার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং সেখান থেকেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। সেই সূত্র ধরে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা।
মন্ত্রী বলেন, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর কম সংখ্যক দেশেই ছাত্ররা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ছাত্ররা অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক সরকার নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের স্বৈরশাসক আয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র জাতীয় নির্বাচন এবং ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রনেতারা অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। সুতরাং ছাত্ররাজনীতি বাংলাদেশে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি পঁচাত্তর সালে রাষ্ট্রপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে যখন স্বৈরশাসন চেপে বসে তখনও বাংলাদেশ বিরোধী ঐ অপশক্তির বিরুদ্ধে ছাত্ররা গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে।
তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি অফিশিয়ালি কোথাও বন্ধ করার যৌক্তিকতা নেই। এটি একটি নির্বুদ্ধিতা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এধরনের প্রাকটিস চালু হলে নিঃস্বার্থ কোনো আন্দোলন গড়ে উঠার সুযোগ থাকবে না। কেননা ছাত্ররাই মূলতঃ নিঃস্বার্থ আন্দোলন অগ্রভাগে থাকে। তাদের মধ্যে ক্ষমতা দখলের কোনো প্রবণতা থাকে না। তারা যে কাজটি করে, সেটি দেশপ্রেম নিয়ে করে। তবে এটা ঠিক যে, বর্তমান ছাত্ররাজনীতিতে অনেক সুবিধাবাদী শ্রেণি প্রবেশ করেছে। কিন্তু তারপরও বৃহৎ একটি অংশ নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য কাজ করে।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে মহামান্য হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন সেটিকে স্বাগত জানাই। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সুযোগ অন্ধকারের সরীসৃপরা এখানে যে অপতৎপরতা শুরু করেছে, আশা করি যুগান্তকারী এই রায়ের মাধ্যমে তা বন্ধ হবে।