বান্দরবানের রুমায় নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে টাকা ও ১৪টি অস্ত্র লুট করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটে। রাত পৌনে ২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে পাওয়া যায়নি।
সোনালী ব্যাংক বান্দরবান অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মোহাম্মদ ওসমান গণি রাতে বলেন, সোনালী ব্যাংক রুমা শাখায় ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা নিয়ে গেছে বলে শোনা যাচ্ছে। রুমা শাখায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা থাকার কথা। সেগুলো ভল্ট ভেঙে নিয়ে গেছে। এই ঘটনার পর এ অঞ্চলের ব্যাংকের সব শাখায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৯টার দিকে কেএনএফের ৭০ থেকে ৮০ জন সশস্ত্র সদস্য রুমা উপজেলা পরিষদ এলাকা ঘেরাও করে। তারা সোনালী ব্যাংকে গিয়ে পাহারারত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় এবং মারধর করতে থাকে। ব্যাংকে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
রুমার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিদারুল আলম বলেন, কেএনএফের সদস্যরা সোনালী ব্যাংক রুমা শাখা লুটপাট করেছে। ব্যাংকের পাহারারত পুলিশ-আনসার সদস্যদের চারটি হাতিয়ার লুট করে নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, কেএনএফ সন্ত্রাসীরা মসজিদে মুসল্লিদেরও মারধর করে তাদের মুঠোফোনও নিয়ে গেছে। ব্যাংক ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকে সন্ত্রাসীরা নিয়ে গেছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘটনার পর উপজেলা পরিষদ এলাকায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, কেএনএফের সদস্যরা ৮টি চায়নিজ রাইফেল, দুইটি এসএমজি, ৪টি শটগান ও ৪১৫টি গুলি লুট করে নিয়ে গেছে। তাদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের এক কর্মচারী আহত হয়েছেন।
রুমা উপজেলা পরিষদ উপজেলা শহর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে বেথেলপাড়ার কাছাকাছি। বেথেলপাড়ায় গত ৫ মার্চ কেএনএফের সঙ্গে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে কেএনএফ আর সন্ত্রাসী তৎপরতা না চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ওই বৈঠকের পরও রুমা উপজেলা সদরসংলগ্ন বম জনগোষ্ঠীর বেথেলপাড়া, মুনলাইপাড়া, এডেনপাড়াসহ বিভিন্ন পাড়ায় কেএনএফের সদস্যরা আশ্রয় নিয়ে ছিল।
বান্দরবানে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে তৎপরতা শুরু করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিপূর্বে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল।
সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছর অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই কমিটির সঙ্গে ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় বেথেলপাড়ায়।