বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চান না শিক্ষক সমিতি, দ্রুত আপিলের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্যাম্পাসে ফের ছাত্ররাজনীতি চালু হোক, তা চান না বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষক সমিতি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ২০১৯ সালে জারি করা যে প্রজ্ঞাপন হাইকোর্ট স্থগিত করেছেন, তার বিরুদ্ধেও বুয়েট প্রশাসনকে আপিল করতে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষকরা। এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতি সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

সোমবার (৮ এপ্রিল) বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ কে এম মঞ্জুর মোরশেদের সই করা বিবৃতি এসব তথ্য জানানো হয়। বুয়েটের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের বক্তব্য ওই বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়, গত ২৮ মার্চ থেকে উদ্ভূত ঘটনাগুলোতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সেই সঙ্গে কিছু পর্যবেক্ষণ সন্নিবেশ করছে।

প্রথমত, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব রেজিস্টার। সবার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য রেজিস্টার মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানানো যাচ্ছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের ই-মেইল প্রেরণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এ ব্যাপারে জাতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের দৃষ্টি আকর্ষণের আহ্বান জানাচ্ছে শিক্ষক সমিতি।

দ্বিতীয়ত, সাংগঠনিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে দেওয়ার জরুরি বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করার যে রায় গত ১ এপ্রিল হাইকোর্টে দিয়েছেন, তার বিপরীতে আপিল করার বিষয়টিতে প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগী হবেন এবং এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতি সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

তৃতীয়ত, ২০১৯ সালের পরের বছরগুলোতে বুয়েটে শিক্ষা-কার্যক্রম অবাধে চলেছে এবং সুষ্ঠু একাডেমিক পরিবেশ বজায় ছিল। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা, নিরাপদ রাখা, বিদ্যাচর্চা অক্ষুণ্ণ রাখা ইত্যাদি আমাদের সবার দায়িত্ব। শিক্ষক সমিতি এমন পরিবেশই প্রত্যাশা করে। এমতাবস্থায় বর্তমান অচলাবস্থা নিরসন এবং স্বাভাবিক একাডেমিক কার্যক্রম চালুর দাবি জানাচ্ছে শিক্ষক সমিতি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং নিষ্কলুষ ক্যাম্পাস আমাদের সবার কাম্য। সব অংশীজনের সহযোগিতা ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে অচিরেই সে অবস্থা ফিরে আসবে বলে শিক্ষক সমিতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।

জানা গেছে, গত ২৮ মার্চ দিবাগত রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এর প্রতিবাদে পরদিন ২৯ মার্চ আন্দোলনে নামেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। এসময় ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা।

এদিকে, ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েট কর্তৃপক্ষের দেওয়া জরুরি বিজ্ঞপ্তির বৈধতা নিয়ে ১ এপ্রিল বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন একটি রিট আবেদন করেন। ইমতিয়াজ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।

ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ জরুরি বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করার আদেশ দেন। একইসঙ্গে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

ফলে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতিচর্চায় শিক্ষার্থীদের আর কোনো বাধা নেই। তবে বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে ছাত্ররাজনীতির নামে বুয়েটে অপরাজনীতি না করার দাবি জানানো হয়েছে। সর্বশেষ শিক্ষক সমিতিও ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রাখার পক্ষেই অবস্থান নিলো।

শেয়ার করুন