ইরানের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক হামলায় যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে পাচ্ছে না ইসরায়েল। হোয়াইট হাউজ ইসরায়েলকে এ বিষয়ে সতর্ক করে জানিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক হামলায় অংশ নেবে না। মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। খবর বিবিসির।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার প্রতিশোধ নিতে গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে ইসরায়েলের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। একরাতেই ইসরায়েলে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
তবে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই প্রায় সবগুলো অস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করেছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্রবাহিনী। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলকে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া ‘সাবধানে’ বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ‘খুব সাবধানে এবং কৌশলগতভাবে চিন্তা করতে’ বলেছেন। এবারই প্রথম ইসরায়েলের ভূখণ্ডে সরাসরি হামলা চালালো।
ইরানের ছোড়া ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্রের ৯৯ শতাংশই ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইসরায়েল। তবে এই হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে ইরান এরই মধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ইসরায়েল বা তার সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো ধরনের প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আরও বড় আক্রমণ চালাবে তারা। অন্যথায়, সংঘাত এখানেই সমাপ্ত।
ইরানের হামলার সময় মার্কিন বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনী কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ৮০টিরও বেশি ড্রোন এবং কমপক্ষে ছয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী ইরাকের ওপর দিয়ে ভূপাতিত করেছে।
ইরানের মতো ইসরায়েলও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিশোধ নিতে পারে। যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি থেকে ইরান হামলা করেছে সেগুলোকে নিশানা করতে পারে তেল আবিব। তবে এটিকে উসকানি মনে করতে পারে ইরান।
উপসাগরীয় ছয় দেশসহ সিরিয়া, ইরাক এবং জর্ডানে সামরিক ঘাঁটি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ বাঁধলে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠতে পারে এসব ঘাঁটি।
ইরান আরও একটি বড় কাজ করতে পারে। সেটি হলো- হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়া। মাইন, ড্রোন ও দ্রুতগামী জলযানের সাহায্যে এই রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে তেহরান। সেটি হলে বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তেল সরবরাহ আটকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমনটি ঘটলে তা সারা বিশ্বের জন্যই দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে সংঘাত আরও বেড়ে যাওয়া আটকাতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ।
এদিকে মার্কিন নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে এ বিষয়ে বার বার পরিষ্কার করেছে যে, তারা বড় ধরনের সংঘাত চায় না। শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একই ধরনের বার্তা কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় ইরানকেও জানানো হয়েছে।