ইরানের হামলায় নতুন ‘জীবন’ পেয়েছেন নেতানিয়াহু

মত ও পথ ডেস্ক

নেতানিয়াহু
নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কিছুদিন আগেও ছিলেন প্রচণ্ড চাপে। এর পেছনে ছিল ১ এপ্রিল ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলায় সহায়তা সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাত ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা। এ ঘটনার পর মনে হয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শেষ পর্যন্ত নেতানিয়াহুর বিষয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছেন।

একই দিন সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ইরানের এক জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডারসহ সাত কর্মকর্তা নিহত হন। এর মধ্য দিয়ে দূতাবাসে হামলা চালানোর ওপর যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা লঙ্ঘন করে নেতানিয়াহু সরকার। একই সঙ্গে আড়ালে চলে যায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা। খবর বিবিসির।

universel cardiac hospital

ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার পর বাইডেনের একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছিল হোয়াইট হাউস। তাতে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ছিল না। আসলে ফিলিস্তিনের বেসামরিক লোকজন ও ত্রাণকর্মীদের রক্ষায় যথেষ্ট তৎপর ছিল না ইসরায়েল সরকার।

ওই ঘটনার পর নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনেও কথা হয়েছিল বাইডেনের। সেখানে গাজায় ইসরায়েলকে কিছু ছাড় দেওয়ার কথা তুলেছিলেন তিনি। যেমন উপত্যকাটিতে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ দেওয়া, ত্রাণ প্রবেশে আরও সীমান্ত ক্রসিং খোলা। ইসরায়েলের আশদাদ বন্দরও খুলে দেওয়ার কথাও বলেছিলেন বাইডেন। নেতানিয়াহুও পরিস্থিতি পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে তেমন কিছুই করা হয়নি।

হোয়াইট হাউসের পাশাপাশি ইসরায়েলি পার্লামেন্টে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের চাপের মধ্যেও ছিলেন নেতানিয়াহু। তাদের সমর্থনেই ইসরায়েলে ক্ষমতায় রয়েছে নেতানিয়াহুর জোট সরকার। এই জাতীয়তাবাদীরা শুধু গাজায় অবাধ ত্রাণ সরবরাহের বিরোধীই নন, চলমান সংঘাত উপত্যকাটিতে আবার অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনের সুযোগ করে দেবে বলেও বিশ্বাস করেন। ২০০৫ সালে গাজা থেকে ইহুদি বসতি সরিয়ে নিয়েছিল ইসরায়েল।

এদিকে সম্প্রতি আরেকটি জল্পনা তৈরি হয়েছিল যে ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহারের ওপর শর্ত আরোপ করবে হোয়াইট হাউস। শনিবার ইরানের হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে একটি মতামত প্রকাশ করা হয়।

‘ইসরায়েলকে দেওয়া সামরিক সহায়তা শর্তহীন হতে পারে না’—শিরোনামে ওই মতামতে সমালোচনা করে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু ও তার সরকারের কট্টরপন্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘বিশ্বাস ভঙ্গ’ করেছেন। ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ও দেশটির নিজেদের রক্ষার অধিকারের অর্থ এটা নয় যে—নেতানিয়াহু দ্বিমুখী আচরণ করে যাবেন, আর তাতে সায় দিতে থাকবেন জো বাইডেন।

এরপরই ইসরায়েলে প্রথমবারের মতো ইরানের হামলা নেতানিয়াহুকে দেয় নতুন ‘জীবন’। তেহরানের ছোড়া তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র রুখে দিতে ইসরায়েলকে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা। আরব দেশগুলোর মধ্যে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ গাজায় ইসরায়েলের হামলার সমালোচনায় সবচেয়ে মুখর ছিলেন। সেই জর্ডানও শনিবার ইরানের হামলা ঠেকাতে তৎপর ছিল।

ইসরায়েলকে মার্কিন সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে যেসব শর্তের কথা বলা হচ্ছিল, তা এখন আড়ালে চলে গেছে। ইরানের হামলার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি সংহতির মনোভাব দেখাচ্ছে ওয়াশিংটন। সংবাদপত্রের মূল শিরোনামে অন্তত কয়েক দিন আর গাজা সংঘাতের বিষয়টি থাকছে না। এতে রাজনৈতিকভাবে নতুন কিছু সুযোগ পেয়েছেন নেতানিয়াহু।

তবে ইরানের হামলার মধ্য দিয়ে নেতানিয়াহুর ওপর চাপের ধরন বদলেছে। ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সেই চাপ দ্বিগুণও হতে পারে। বাইডেন খুব স্পষ্টভাবেই ইসরায়েল Bday তার অভিমত জানিয়েছেন। তার ভাষ্যমতে, ইসরায়েলের উচিত এই পর্যায়ে নিজেদের বিজয়ী মনে করে পাল্টা হামলা না চালানো। তিনি এটাও বলেছেন, ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ‘লৌহবর্মের’ মতো।

শেয়ার করুন