চালুর অপেক্ষায় ১২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি পতেঙ্গা টার্মিনাল

মত ও পথ ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে নবনির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) অপারেশনে যাওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের মার্চের শুরুর দিকে। কিন্তু মার্চ শেষ হয়ে এপ্রিলের ১৮ তারিখেও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় অপারেটর প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল। প্রতিষ্ঠানটি অপারেশনে যাওয়ার জন্য প্রাথমিক যন্ত্রপাতি আনলেও এখনো বিভিন্ন সংস্থার ছাত্রপত্র সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে অপারেশন কার্যক্রম শুরু করতে সময় লাগছে।

তবে আগামী মাসের মধ্যেই এটির কার্যক্রম শুরুর আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করতে আরো তিন মাস সময় বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। যদিও কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, মে মাসেই কাজ শেষ করে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের অপারেশন কার্যক্রম শুরু হবে। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের একমাত্র কনটেইনার টার্মিনাল যেটি বিদেশি অপারেটরের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

universel cardiac hospital

এক হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই টার্মিনালে তিনটি জেটিতে একসঙ্গে তিনটি কনটেইনার জাহাজ ভিড়তে পারবে। বছরে সাড়ে চার লাখ টিইইউএস (২০ ফুট কনটেইনারের একক) কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম টার্মিনালটি। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ২২ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল। চুক্তি অনুযায়ী পাঁচ মাসের মধ্যেই অর্থাৎ চলতি এপ্রিলেই পিসিটির কার্যক্রম শুরুর কথা ছিল।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী ও বন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি টার্মিনাল চালু করতে গেলে প্রথমে প্রয়োজন হয় যন্ত্রপাতি। এরপর নিতে হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ ছাড়পত্রসহ ২৫টি দপ্তরের ছাড়পত্র। এ ছাড়া কাস্টম হাউসের সার্ভার এবং বন্দরের পণ্য ডেলিভারি সিস্টেমের সঙ্গেও অনলাইন সংযোগ স্থাপন করতে হয়। অর্থাৎ বন্দর ও কাস্টম হাউসের সিস্টেমের সঙ্গে টার্মিনাল অপারেশনের আন্তঃসংযোগ করতে হয়। এর মধ্যে রেড সি গেটওয়ে জনবল নিয়োগ দিচ্ছে, কিছু যন্ত্রপাতি আনলেও অনেকগুলো ছাড়পত্র নেওয়া বাকি। আর এখনো বন্দর ও কাস্টম হাউসের সিস্টেমের সঙ্গে টার্মিনাল অপারেশনের আন্তঃসংযোগ হয়নি। এসব শেষ করে প্রতিষ্ঠানটিকে অপারেশনে যেতে হবে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ‘আমাদের এখন বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়ছে। এটি চালু করা গেলে চট্টগ্রাম বন্দরের চাপ অনেকটা কমে আসবে। ফলে ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন। কিন্তু পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল দ্রুত অপারেশনে যেতে পারছে না। পিসিটি অপারেশনে যাওয়ার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা প্রয়োজন সবটাই করতে হবে। আমরা সহযোগিতা করলে অপারেশনে যেতে সময় লাগবে না।’

বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, একটি কনটেইনার টার্মিনালের কাজ শুরু করতে হলে তাদের অনেক অনুমতির প্রয়োজন হয়। এসব অনুমতি নিতে একটু সময় লাগছে। আশা করছি, মে মাসেই অপারেশনে যেতে পারবে পিসিটি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. সোহায়েল গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে আন্তর্জাতিক মানের একটি অপারেটর। তারা চমৎকার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এ নিয়ে আমাদের একটি কমিটিও আছে। দুই পক্ষ মিলে কাজ করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, টার্মিনাল পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ কি গ্যান্ট্রি ক্রেন আসেনি। এটি ইয়ার্ডের ধরন-আকার অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্ডার করে নির্মাণ করতে হয়। কি গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে পিসিটি পুরোদমে চালু হতে সময় লাগবে আরো দুই বছর। এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে পাশের আরেকটি ইয়ার্ডে, পণ্য ডেলিভারি হবে সেখানেই। ফলে এই টার্মিনালে কখনো জট হবে না। এ ছাড়া পতেঙ্গা কনটেইনারে মালপত্র লোড-আনলোড হবে। এ দুটি কাজ এখান থেকে হবে। আর বাকি সব কাজ হবে তাদের ইয়ার্ড থেকে।

শেয়ার করুন