ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল যদি ইরানে পাল্টা হামলা করে তাৎক্ষণিকভাবে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলে হুঙ্কার দিয়েছিল তেহরান। তবে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ইরানের ইস্ফাহানে ইসরায়েলের হামলার খবর প্রকাশ হবার কয়েক ঘণ্টা পর একজন জ্যেষ্ঠ ইরানি কর্মকর্তা বলেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এখনই প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই ইরানের।’
দুই মার্কিন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইরানের ওপর এই হামলার ইসরায়েলের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। যদিও ইসরায়েল এখন পর্যন্ত এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ইরানি ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ঘটনাটি যে বিদেশি কোন উৎস থেকে হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা বাইরে থেকে কোনও আক্রমণের সম্মুখীন হইনি এবং চলমান আলোচনা হামলার চেয়ে অনুপ্রবেশের দিকেই বেশি ঝুঁকছে।’
ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল সাইয়্যেদ আব্দুর রহিম মুসাভি শুক্রবার সকালের ঘটনা নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ইস্ফাহানে বিস্ফোরণের যে শব্দ শোনা গেছে তা ছিল সন্দেহজনক উড়ন্ত বস্তুকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর শব্দ। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে গুলি ছোঁড়ার কারণে এই শব্দ শোনা গেছে এবং এ ঘটনায় কোনো ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, আকাশে উড়ন্ত বস্তুর উপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে একজন ইরানি বিশ্লেষক দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেছিলেন, ‘ইস্ফাহানে বিমান প্রতিরক্ষা দিয়ে যে মিনি ড্রোনগুলোকে গুলি করা হয়েছিলো, সেগুলো ইরানের ভেতর থেকেই অনুপ্রবেশকারীরা উড়িয়েছিলো।’
অন্যদিকে ইরানের আধা-সরকারি মেহর নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইসফাহানের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে তিনটি ড্রোন শনাক্ত করা হয় এবং দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার পরে সেগুলো আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
এর আগে ইরানের আধা-সরকারি ফারস নিউজ এজেন্সি জানায়, শুক্রবার ভোরে ইরানের ইসফাহান শহরের উত্তর-পশ্চিমে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। শহরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণটি ঘটেছে। তবে বিস্ফোরণের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি এই নিউজ এজেন্সি।
তবে ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনা ‘নিরাপদে’ রয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি। দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী আইআরআইবি ‘নির্ভরযোগ্য সূত্র’ উদ্ধৃত করে বলেছে, ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনা ‘সম্পূর্ণ নিরাপদ’।
প্রসঙ্গত গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরাইল। এতে বিপ্লবী গার্ডের দুই কমান্ডারসহ ৭ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হন। প্রতিক্রিয়ায় গত শনিবার গভীর রাতে ইসলামিক বিপ্লব গার্ড কর্পস এবং অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েল-অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইরান এই হামলা চালায়। এরপর থেকেই ইরানের হামলার প্রতিক্রিয়া জানানোর পরিবর্তে ইসরায়েলকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। এমনকি ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো পদক্ষেপে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইহুদিবাদী দেশটির সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, বিবিসি