ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পাওয়ার পথ আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিতে ভেটো দিয়েছে দেশটি।
খসড়া প্রস্তাবটিতে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রতি সুপারিশ করা হয়েছিল।
নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের ১২টি এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। ভোটদানে বিরত ছিল যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড। ভেটো প্রদান করে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে, জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার জন্য ফিলিস্তিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া।
জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ভেটো প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র দেখিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে তারা আসলে কী ভাবে।
তিনি আরও বলেন, ওয়াশিংটন মনে করে, ফিলিস্তিনিরা নিজস্ব রাষ্ট্র পাওয়ার যোগ্য নয়। এটি কেবল ইসরায়েলের স্বার্থই উপলব্ধি করতে পারে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেন, ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন স্পষ্ট বলেছেন, এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি কেবলমাত্র ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চয়তাসহ একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে। গণতান্ত্রিক ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয়, এমন অন্য কোনো পথ নেই।
তিনি বলেন, আবেদনকারী একটি রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচিত হওয়ার মানদণ্ড পূরণ করে কি না, তা নিয়ে অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়েছে।
ভেটো না পড়লে প্রস্তাবটি পাস হতে ৯ ভোটের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের কোনো প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন— এ স্থায়ী পাঁচ সদস্যের কোনো একটি দেশ বিপক্ষে ভোট দিলে ওই প্রস্তাব আর গৃহীত হয় না।
ফিলিস্তিন বর্তমানে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে রয়েছে। ২০১২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে কার্যত রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেয়েছিল ফিলিস্তিন। তবে পূর্ণ সদস্যপদ পেতে নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন। অবশ্য সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত, জাতিসংঘের মাধ্যমে নয়।
এমন সময় জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হওয়ার চেষ্টা করছে ফিলিস্তিন, যখন ছয় মাস ধরে গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে দখলকৃত পশ্চিম তীরে বসতিস্থাপন বিস্তৃত করছে দেশটি।
এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, সাম্প্রতিক উত্তেজনা ইসরায়েল এবং একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন, কার্যকর ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মধ্যে স্থায়ী শান্তি খোঁজার সদিচ্ছা আছে এমন প্রচেষ্টাকে সমর্থন করাটাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।