গত শুক্রবার ইরানের ইস্ফাহানে ইসরায়েলের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র নিজেরাই আকাশে ধ্বংস করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। অত্যাধিক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতেই তারা এমনটা করে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস।
ইরানের তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জবাবে দেশটিতে ব্যাপক পরিসরে হামলা চালাতে চেয়েছিল ইসরায়েল। কিন্তু ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্র বন্ধুদের চাপ ছিল ইরানে হামলা করে যেন মধ্যপ্রাচ্যে দ্বন্দ্ব না বাড়ায় নেতানিয়াহু।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বড় পরিসরে হামলায় যায়নি ইসরায়েল। কিন্তু যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার অভ্যন্তরীণ চাপে এবং নিজেদের সক্ষমতা জানান দিতে ইরানে হামলা করতে উন্মুখ ছিলেন নেতানিয়াহু। সেজন্যই ইরান যাতে পাল্টা প্রতিক্রিয়া না দেখায় সে লক্ষ্যে এমন আঁটসাট পরিকল্পনা করে ইসরায়েল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর একটি ইরানের একটি বিমানবিধ্বংসী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হানে। প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে—তা জানার পর দ্বিতীয় আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে থাকতেই ধ্বংস করে ইসরায়েলি বাহিনী। এ পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল অত্যধিক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো।
মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, হামলার পরিকল্পনা ছিল ইরানের রাজধানী তেহরানের কাছের সামরিক ঘাঁটিতেও। তবে পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ইসরায়েল সরকার।
ইসরায়েলের তিন কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী এ গণমাধ্যম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন মিত্রদেশের কূটনৈতিক চাপে ইরানে বড় ধরনের হামলার সিদ্ধান্ত বাতিল করে ইসরায়েল। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সূত্রে প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে বড় পরিসরে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ুক, তা চায়নি ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা।
১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরান কনস্যুলেটে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এর জবাবে ১৪ এপ্রিল ইসরায়েল লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে তেহরান। ওই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ৯৯ শতাংশ ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করে ইসরায়েলি বাহিনী।
এরপরই মূলত পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে শুক্রবার ভোররাতে ইরানের ইস্পাহান শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। যদিও এই হামলার ব্যাপারে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। এমনকি তেহরান থেকেও এর জন্য ইসরায়েলকে সরাসরি দায়ী করে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরানের কাছের সামরিক ঘাঁটিসহ ইরানের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে বড় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল ইসরায়েল। এতে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। এমন হামলা চালানো হলে তা এড়িয়ে যাওয়া তেহরানের পক্ষে কঠিন ছিল। ফলে দেশটির পক্ষ থেকে শক্তিশালী পাল্টা হামলা চালানোর ঝুঁকি বাড়ত। সেজন্য এমন পরিকল্পনা থেকে সরে আসে ইহুদিবাদী দেশটি।
মধ্যপ্রাচ্যে বড় পরিসরে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ুক, তা চায়নি ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা। তাই ইরানে ব্যাপক হামলা না চালানোর জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাজ্য ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও একই অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এর জেরেই নিজের পরিকল্পনা বাতিল করেন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েল ও পশ্চিমা কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, গত শুক্রবার ইরানের পশ্চিমে কয়েক শ কিলোমিটার দূর থেকে ‘অল্প কিছু ক্ষেপণাস্ত্র’ ছোড়ে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান। এ ছাড়া ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধন্দে ফেলতে ‘কোয়াডকপ্টার’ নামে পরিচিত হামলাকারী ড্রোনও ছোড়া হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে ১৫ এপ্রিল ইরানে হামলা চালাতে চেয়েছিল। এর জেরে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েলে ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হামলা বাড়াতে পারে’—এমন শঙ্কায় পরে ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। তবে শুক্রবারের হামলার ক্ষেত্রেও একই শঙ্কা ছিল কি না, তা জানানো হয়নি।