চুয়াডাঙ্গা, যশোর এবং পাবনার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। এছাড়া খুলনা বিভাগের বাকী অংশ, রাজশাহী জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে দেশের বাকী অংশের ওপর দিয়ে বইছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। যার ফলে সারা দেশজুড়ে জনজীবনে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকজনের মৃ্ত্যু হয়েছে। দুর্ভোগ এড়াতে সরকার ইতোমধ্যে স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়া অনলাইনে ক্লাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়।
জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ, আবহাওয়াবিদ এবং নগর পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে আগামী কয়েক বছরে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার এমন বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। আর তার ফলে সৃষ্টি হতে পারে বিপর্যয়কর অবস্থা। বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রধান ভূমিকা রেখেছে। সেই সাথে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে তাপমাত্রার এমন বৈরি আচরণের জন্য অপরিকল্পিত নগরায়নেরও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কেননা গত ২৮ বছরে ঢাকা থেকে ২৪ বর্গকিলোমিটারের সমআয়তনের জলাধার ও ১০ বর্গকিলোমিটারের সমপরিমাণ সবুজ কমে গেছে।
অবশ্য, এটা শুধু ঢাকার চিত্র নয়। এখন জেলা উপজেলা পর্যায়েও পুকুর বা জলাধার ভরাট করে পরিকল্পনাহীন ভবন নির্মাণের তীব্র প্রতিযোগিতা চলেছে। আমরা মনে করি, নগরগুলোর প্রতিটি ভবন পরিকল্পিত না হলে এবং এলাকাগুলোতে সবুজের ভারসাম্য আনা না হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে। তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সম্প্রতি রাজউক একটি নীতি প্রণয়ন করেছে – যেখানে প্লটের আকার ভিত্তিক গাছের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আমরা রাজউকের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে জলবায়ু নীতি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে মেট্রো রেলের মতো বিদ্যুৎ চালিত গণপরিবহন বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব ভবন নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। একইসঙ্গে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে শহরগুলোকে একটি মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় এনে, সবুজায়ন নিশ্চিতে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। এজন্য শহরগুলোর জনসংখ্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে শহরের সুযোগসুবিধাগুলোকে বিকেন্দ্রীকরণ করা যেতে পারে। আমরা জানি, তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম ক্রীড়নক হচ্ছে কংক্রিট, অথচ ঢাকার এমন ওয়ার্ড আছে যেখানে ৯০ ভাগই কংক্রিট। কাজেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কংক্রিটের ব্যবহার হ্রাস করতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া এবং নগরায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে সবুজের পরিমাণ বাড়িয়ে নগরের ২৫-৩০ ভাগ সবুজায়ন নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।