যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার হুমকি উপেক্ষা করে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করছে পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) চূড়ান্তকরণ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতে সহায়তা বৃদ্ধিসহ নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ ও তেহরান। ইরানি প্রেসিডেন্টের তিন দিনের পাকিস্তান সফর শেষে বুধবার (২৪ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।
ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির পাকিস্তান সফরকালে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ও বাণিজ্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত আটটি চুক্তি সই হয়েছে। তবে ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের এমন উষ্ণ সম্পর্ক ভালোভাবে নিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি সই করায় পাকিস্তানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকিও দিয়েছে তারা।
গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেছেন, কোনো দেশ ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করার আগে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।
তবে ওয়াশিংটনের এই হুমকিকে খুব একটা আমলে নিচ্ছে না পাকিস্তান ও ইরানের সরকার। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, উভয় পক্ষই দ্রুত এফটিএ চূড়ান্ত করতে, বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক পরামর্শ (বিপিসি) ও জয়েন্ট বিজনেস ট্রেড কমিটির (জেবিটিসি) পরবর্তী সেশনের পাশাপাশি শিগগির যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) ২২তম সভা আয়োজন করতে সম্মত হয়েছে।
উভয় প্রতিবেশী ‘নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া বাড়াতে’ সম্মত হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উভয় দেশ সম্মিলিত সীমান্ত বাজার স্থাপন, অর্থনৈতিক মুক্ত অঞ্চল এবং নতুন সীমান্ত খোলাসহ যৌথ উন্নয়নমুখী অর্থনৈতিক প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের অভিন্ন সীমান্তকে ‘শান্তির সীমান্ত’ থেকে ‘সমৃদ্ধির সীমান্তে’ রূপান্তরিত করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তারা বিদ্যুৎ বাণিজ্য, পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইন এবং ইরান-পাকিস্তান গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পসহ জ্বালানি খাতে সহযোগিতার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ এক হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দুই দেশ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, কিছু দেশে ‘ইসলাবিদ্বেষের ক্রমবর্ধমান ঘটনা, পবিত্র কোরআন এবং পবিত্র প্রতীকের অবমাননার’ নিন্দা জানিয়েছে ইরান ও পাকিস্তান। তারা গত মার্চে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ‘ইসলাবিদ্বেষ মোকাবিলার ব্যবস্থা’ শীর্ষক প্রস্তাব গ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছে।
এছাড়া, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন ও নৃশংসতার জন্য জোরালো ও দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা’ জানিয়েছে ইরান-পাকিস্তান। গাজায় অবিলম্বে ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি, সেইসঙ্গে ‘ইসরায়েলি সরকারের অপরাধের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার’ আহ্বান জানিয়েছে তারা।
এ সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে ইরান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাইসি।
সূত্র: ডন, জিও নিউজ