দেশের অতি বাম, অতি ডান—সবই এখন এক হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই দুই মেরু এক হয়ে সরকারকে উৎখাত করার কথা বলছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেছেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশের কিছু লোক, যারা একেবারে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া—এদের কিছু বক্তব্য আর আমাদের দেশের কিছু আছে বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে, সেই তথাকথিত বুদ্ধিজীবী অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিবত গাইছে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এ দেশের অতি বাম, অতি ডান—সবই এখন এক হয়ে গেছে, এটা কীভাবে হলো, আমি জানি না। এই দুই মেরু এক হয়েও সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। অপরাধটা কী আমাদের?
করোনা মহামারিতে বিনা পয়সায় সরকার টিকা দিয়েছে, জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর ধনী দেশগুলো দেয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ দিয়েছে। করোনার পরীক্ষা বিনা পয়সায় করা হয়েছে। কোনো ধনী দেশও তা করেনি।
তিনি এ বিষয়ে বলেন, আমরা দুই হাতে পানির মতো টাকা খরচ করে মানুষকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নিয়েছি। খুব কম দেশই সেটা করতে পেরেছে। আমরা সেখানে সাফল্য অর্জন করেছি। মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়েছি, শিশুমৃত্যুর হার কমিয়েছি, সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছি, মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করেছি, মানুষের ঘরের কাছে চিকিৎসাসেবা নিয়ে গেছি, শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি আছে। সব দিক থেকেই তো বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, পিছিয়ে আছি কোথায় আমরা?
করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টানিষেধাজ্ঞায় বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি, এ সমস্যার কারণে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচন ও ভোটের অধিকার নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের জন্মটা কোথায়? অবৈধভাবে হত্যা-ক্যু, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারীদের পকেট থেকে তৈরি করা যে রাজনৈতিক দল, তাদের কাছে এখন গণতন্ত্রের সবক শুনতে হয়, ভোটের অধিকারের কথা শুনতে হয়। যারা হ্যাঁ/না ভোটের মাধ্যমে মানুষের ভোট চুরি শুরু করেছিল।
বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা দল, যার কোনো মাথামুণ্ড নেই। তাদের যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন, তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও সাজাপ্রাপ্ত আসামি, দেশান্তরি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেই সুবাদে সারাক্ষণ অনলাইনে শুধু নির্দেশ দেয়। সেই সিদ্ধান্তেরও ঠিক-ঠিকানা নেই।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের নির্বাচন সবচেয়ে সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনে লাশ পড়েছে। ভোটবাক্স ছিনতাই হয়েছে, নানা রকম ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু এবার তা হয়নি।
বাংলাদেশের পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩-১৪ সালে পুলিশের ওপর হামলা সবাই দেখেছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে ঘটনা ঘটাল—মানুষ হত্যা, রেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারা, সেগুলো তো তারা করেছে। পুলিশের ওপর লাঠিসোঁটা দিয়ে হামলা তো কল্পনা করা যায় না। অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন, হাসপাতালে আক্রমণ। ইহুদিরা যেমনটা ফিলিস্তিনে ঘটিয়েছে, ঠিক তেমনি বিএনপি বাংলাদেশে ঘটিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের হামলার ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই দেশে মানবাধিকার কতটুকু আছে, সেটাই প্রশ্ন। কথা বলার স্বাধীনতা কতটুকু আছে, সেটাই প্রশ্ন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকার কতটুকু আছে, সেটাই প্রশ্ন। বাংলাদেশের ওপর মানবাধিকারে রিপোর্ট লেখে, নিজেদের আয়নার চেহারা দেখে না। এটাই প্রশ্ন।
প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে আরও বলেন, মানবাধিকার সংস্থা, বিচার বিভাগ, যারা নিষেধাজ্ঞা দেয়, আমাদের ওপর খবরদারি করে, তাদের কাছে জবাব চাই। সেখানে আমার বাঙালি কেন মারা যাবে? ওই রকম ছোট্ট একটা শিশুকে মায়ের কোল থেকে নিয়ে হত্যা করা! শিক্ষকদের ওপর নির্যাতন করা, এর জবাব আমরা চাই। এটা তো সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘন।