বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াই ছিল পঙ্কজ ভট্টাচার্যের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ দেশের প্রান্তিক মানুষ আক্রান্ত হলে সেখানে ছুটে যেতেন প্রয়াত প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য। বঞ্চনার বিরুদ্ধে তিনি আমৃত্যু লড়াই করেছেন। রাজনীতির এই সংকটময় মুহূর্তেও তার প্রয়োজন ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঐক্য ন্যাপের সাবেক সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের প্রথম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভায় তার সহকর্মী, অনুরাগী ও স্বজনেরা এভাবে তাকে স্মরণ করলেন।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে এই স্মরণসভার আয়োজন করে বিশেষ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী। এই আয়োজনে পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, ‘দেশভাগের পর একদিকে তার পুরো পরিবার ভারত চলে যাচ্ছে, অন্যদিকে তাকে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। কারাগার থেকে বেরিয়ে পঙ্কজদা আর ভারত গেলেন না। তিনি বলতেন, আমার প্রাণটা এখানে, আমি ভারত যাব না। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো আক্রমণ হলে পঙ্কজ ভট্টাচার্য সেখানে পাগলের মতো ছুটে যেতেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, এখন ছাত্ররা ছাত্ররাজনীতি ভুলে গেছে। তারা আখের গোছাতে ব্যস্ত। তাদের পৃষ্ঠপোষকেরাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে। যারা বাম রাজনীতি করেন, তাদের অবস্থা ও তাদের ছাত্রসংগঠনের অবস্থা দেখেন। আফসোস লাগে। এ রকম তো থাকার কথা নয়। এ সময় পঙ্কজদার মতো নেতার খুব প্রয়োজন ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন—এটি ছিল পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সবচেয়ে বড় সাফল্য, এ কথা উল্লেখ করে গণফোরামের সভাপতি মফিজুল ইসলাম খান কামাল বলেন, তিনি (পঙ্কজ ভট্টাচার্য) মানুষকে ভালোবাসতেন। ধর্ম-বর্ণ, উঁচু-নিচু—এসব তিনি কোনো দিন দেখেননি।

গণফোরামের (মন্টু) সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, সব মানুষের প্রতি তার (পঙ্কজ ভট্টাচার্য) একটা দরদ ছিল। তাকে হারিয়ে আমরা অভিভাবকহীন হয়ে গেছি।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু বলেন, মূলধারার রাজনীতিতে থাকার পরও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের প্রতি তার বিশেষ মনোযোগ ছিল। সব ত্যাগ করে দেশে থেকে গিয়েছিলেন, তার এই ত্যাগও স্মরণ রাখতে হবে।

‘দেশে বাম রাজনীতিবিদদের কোনো অবস্থান নেই। তারা বলিষ্ঠভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারেন না, আবার দরিদ্রদের সাহায্যও করতে পারেন না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বামদের এক করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আজ তিনি নেই, কিন্তু তাঁর এই উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা রয়ে গেছে’ বলে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো.শহীদুল্লাহ সিকদার।

অনুষ্ঠানে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের শ্যালিকা বহ্নিশিখা দাশ পুরকায়স্থ বলেন, বঞ্চনার বিরুদ্ধে সুষম বন্টনের জন্য তিনি লড়াই করেছিলেন। শেষজীবন পর্যন্ত তার সেই লড়াই জারি ছিল। তিনি যে কাজ করে যেতে পারেননি, তার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে গেছেন। উপস্থিতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, উনি যে কাজ করতে পারলেন না, আপনারা যেন সেই কাজটি করেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে আইনজীবী তবারক হোসেন নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমী হিসেবে পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে তুলে ধরেন।

বিশেষ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর আহ্বায়ক খান সিদ্দিকুর রহমানের সঞ্চালনায় সংগঠনের সদস্য পার্থ সারথি চক্রবর্তীসহ অনেকে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে তার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পঙ্কজ ভট্টাচার্য।

শেয়ার করুন