সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে আলোচিত ‘শরীফার গল্প’ বাদ দিতে বিশেষজ্ঞ কমিটি সুপারিশ করায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী। সমাবেশে বক্তারা বলেন নারী-পুরুষের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরও (হিজড়া) সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধাসহ বাঁচার অধিকার আছে। এখন বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ মেনে ওই গল্প বাদ দেওয়া হলে তা পক্ষান্তরে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকেই প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল হবে। আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হয় এ প্রতিবাদ সমাবেশ। সমাবেশের বিভিন্ন পর্যায়ে সংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করা হয়।
উল্লেখ্য, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক একটি পাঠ রয়েছে। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে বিষয়টি পর্যালোচনায় বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই কমিটি আলোচিত ‘শরীফার গল্প’ শীর্ষক গল্পটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
আজকের সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি বদিউর রহমান বলেন, ‘শরীফার গল্প’টি ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হলেও এটি পর্যালোচনায় যে বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়েছে, তাতে ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়ের অধ্যাপকের আধিক্য দেখা গেছে। সেখানে কেন সমাজবিজ্ঞানবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের প্রাধান্য দেওয়া হয়নি, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। বদিউর রহমান বলেন, তারা বিশেষজ্ঞ কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছেন। প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘শরীফার গল্প’ লেখাটিতে কোন শব্দগুলো অসংগতিপূর্ণ তা বোধগম্য নয়। মূলত ‘শরীফার গল্প’টিতে সমাজের অন্যতম একটি জনগোষ্ঠী, হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে একটি নিরীহ কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সেখানে এই জনগোষ্ঠীর মানুষের প্রতি সমাজের বাকিরা কী ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করে, তা বর্ণনা করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সব মানুষকে সমান চোখে দেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু, পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের পর থেকেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ গল্পটিকে নিয়ে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ মেনে গল্পটি বাদ দেওয়া হলে তা পক্ষান্তরে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকেই প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল হবে বলে মনে করেন অমিত রঞ্জন দে।