ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধাননগরের নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসের যে ফ্ল্যাটে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে কোনো লাশ পাওয়া যায়নি। তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে সরিয়ে ফেলা হয়েছে কি না, সেটিও নিশ্চিত করতে পারেনি কলকাতা পুলিশ। এমপি খুন হয়েছেন ধরে নিয়েই তার মরদেহ খুঁজে পেতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সেখানকার পুলিশ।
সেই ফ্ল্যাটে আজীমের মরদেহ না পাওয়ার বিষয়টি কলকাতা পুলিশ ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উপহাইকমিশনকে জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সেমিনার শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, এমপি আনোয়ারের হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। যে ফ্লাটে তাকে হত্যা করা হয়েছিলো বলে সন্দেহ করা হচ্ছে সেখানে কলকাতা পুলিশ ঢুকেছিলো। তবে সেখানে তার কোনো লাশ পাওয়া যায়নি। হত্যার কারণও নিশ্চিত জানা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, তবে হত্যাকাণ্ডের পর কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। ডিবি আটক করেছে, কলকাতা পুলিশও দুজনকে আটক করেছে। কীভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
এদিকে বুধবার বিকালে নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনস থেকে বের হয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের আইজি সিআইডি অখিলেশ চতুর্বেদী সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়নি। আমরা কেসের তদন্ত শুরু করেছি। আমাদের কাছে যা তথ্য রয়েছে, তাতে ১৩ তারিখে তিনি এই ভবনে ঢুকেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ১৮ মে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারের কাছে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। সংসদ সদস্যের পরিচিত গোপাল বিশ্বাস এই অভিযোগ দায়ের করেন এবং সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই আমরা তদন্ত শুরু করি। গত ২০ মে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই কেসটিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার একটি নির্দেশ আসে। এরপর আজ ২২ তারিখে আমাদের কাছে একটি তথ্য আসে যে, তাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। এরপরে আমাদের পুলিশ এই ফ্ল্যাটটিকে শনাক্তকরণ করে। কারণ এখানেই তাকে শেষবার দেখা গিয়েছিল। পরবর্তী বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে আরও তদন্ত চলছে। সিআইডি এই তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে।
এমপি আনোয়ারুলের শরীর টুকরো টুকরো করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে তার সত্যতা কতুটুকু, এমন প্রশ্নের জবাবে চতুর্বেধী বলেন, এটা এখনই বলা সম্ভব নয়। টিম ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফটোগ্রাফিসহ সবাইকে এই তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তারা খতিয়ে দেখছেন।
চিকিৎসা ও বন্ধুর মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে গত ১২ মে ভারতে যান আনোয়ারুল আজীম। পরদিন ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। গত ১৬ মে সকাল ৭টা ৪৬ মিনিটে এমপি আজীমের ফোন থেকে পিএসের নম্বরে সর্বশেষ কল আসে। কলটি ধরতে পারেননি পিএস। এক মিনিট পর পিএস তাঁকে কল করলে ওপাশ থেকে রিসিভ হয়নি। এর পর থেকে এমপির সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি আজীমের খুন হওয়াকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেছেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তদন্ত চলছে, যারা যারা এ খুনের সঙ্গে জড়িত সবার বিষয়ে জানতে পারবে। ভারতের পুলিশও সহযোগিতা করছে। আমাদের পুলিশ অত্যন্ত দক্ষ। তদন্ত শেষ হলে এ খুনের মোটিভ কী, সবকিছু বিস্তারিত দিতে পারবে আমরা।