খেলা শেষ হতে তখনো বাকি আছে গোটা এক ওভার অর্থাৎ ৬ বল। তবে কোনো অঘটন না ঘটলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ফাইনাল ততক্ষণে নিশ্চিত হয়ে গেছে। রাজস্থান রয়্যালসের জয় পেতে গত রাতে তখনো যে মেলাতে হতো ৪২ রানের অসম্ভব এক সমীকরণ। দলের জয় নিশ্চিত হতেই গ্যালারিতে হায়দরাবাদ ভক্তদের উচ্ছ্বাস। আলাদাভাবে নজর কাড়লেন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিক কাব্য মারানও।
কখনও উৎকণ্ঠা, কখনও বা উচ্ছ্বাস—ম্যাচ চলাকালীন ঘুরেফিরে এমন নানা অভিব্যক্তিতে বারবার টেলিভিশন ক্যামেরায় দেখা গিয়েছিল তাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বরাবরই ট্রেন্ডিংয়ে থাকা কাব্যকেে এখন সবচেয়ে সুখী মানুষদের একজন ভাবা যেতেই পারে।
শেষ ওভারে ৪২ রানের টার্গেটে মাত্র ৫ রান তুলতে পারল রাজস্থানের ব্যাটাররা। আর তাতে ৩৬ রানের জয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেছে প্যাট কামিন্সের দল। আগামীকাল রোববার (২৬ মে) শিরোপার লড়াইয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সের মুখোমুখি হবে তারা।
চেন্নাইয়ের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ১৭৫ রানের পুঁজি পেয়েছিল হায়দরাবাদ। দলের হয়ে ৩৪ বলে ৫০ রানের সর্বোচ্চ ইনিংস এসেছে হেনরিখ ক্লাসেনের ব্যাট থেকে। টার্গেট তাড়ায় ৭ উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ওভারে ১৩৯ রানে থেমেছে রাজস্থানের ইনিংস।
চেন্নাইয়ের মাঠে শিশিরের আশঙ্কায় টস জিতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে আগে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন রাজস্থান অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। ব্যাট করতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি হায়দরাবাদের দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ওপেনার অভিষেক শর্মা। যদিও প্রতি ম্যাচের ন্যায় এদিনও তিনি তাণ্ডব চালানোর ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন। অন্যদিকে, নিজের প্রথম ওভারে উইকেট নিতে সিদ্ধহস্ত ট্রেন্ট বোল্ট। তাকে ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট অভিষেক। ৫ বলে একটি করে চার–ছয়ে বাঁ–হাতি ওপেনার করেন ১২ রান।
এরপরও অবশ্য রানের গতি কমেনি হায়দারাবাদের। যদিও চলতি আসরে তিনবার আড়াইশ পেরোনো দলের সঙ্গে এমন চিত্র মিলছিল না। দ্বিতীয় উইকেটে রাহুল ত্রিপাঠির সঙ্গে ৪২ রানের জুটি গড়েন ট্রাভিস হেড। তবে এর ভেতর পুরো রানই তুলেছেন রাহুল। তিনি ১৫ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৩৭ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন। বোল্টের বলে তার বিদায়ে ভাঙে সেই জুটি। এরপর পুরো টুর্নামেন্টে ফ্লপ অ্যাইডেন মার্করামও ফেরেন মাত্র ১ রান করে। ফলে চাপে পড়ে যায় হায়দরাবাদ।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে হেড–ক্লাসেন মিলে ৪২ রান তুলে সেই বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালান। তবে হেডের কিছুটা ধীরগতির ইনিংস শেষ হয় ৩৪ রানে। ২৮ বলের ইনিংসটা তার সঙ্গে বেমানানই বটে। এই অজি ওপেনারের বিদায়ের পর ইনিংসের শেষ পর্যন্ত নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে হায়দরাবাদ। ফলে যোগ্য সঙ্গ না পেয়েই একাই লড়াই চালিয়ে যান ক্লাসেন। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার প্রায় শেষ পর্যন্ত থেকে ব্যক্তিগত ফিফটি পূর্ণ করেন। তার বিদায়ে হায়দরাবাদের আরও বড় পুঁজির আশা শেষ হয়ে যায়। ৩৪ বলে ৪ ছক্কায় ৫০ রান করেন ক্লাসেন।
শেষদিকে শাহবাজ আহমেদের ওয়ানডে মেজাজের ১৮ রান ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কের ঘরও ছুঁতে পারেননি। ফলে ১৭৫ রানেই থামে হায়দরাবাদ। অন্যদিকে, রাজস্থানের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নেন বোল্ট ও আভেশ খান।
চ্যালেঞ্জিং টার্গেট তাড়ায় শুরুটা খারাপ ছিল না রাজস্থানের। তবে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় তারা। রাজস্থানের হয়ে লড়াই করে গেছেন ধ্রুব জুরেল। দলের বাকি ব্যাটারেরা না পারলেও তিনি শেষ পর্যন্ত লড়াই করলেন। যশস্বী ওপেন করতে নেমে ৪২ রান করেছিলেন। বাকি ব্যাটারেরা কেউ ২০ রানের গণ্ডি পার করতে পারেননি। সেখানে জুরেল ৩৫ বলে ৫৬ রান করেন। অপরাজিত থাকেন তিনি। কিন্তু দলকে জেতাতে পারেননি।
ব্যাটিংয়ে অবদান রাখার পর বল হাতে জ্বলে উঠেন হায়দরাবাদের বোলার শাহবাজ। ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে তুলে নেন ৩ উইকেট। যশস্বী জয়সওয়াল, রিয়ান পরাগ এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের উইকেট নেন শাহবাজ। অন্য ব্যাটারেরাও তাঁর বলে খুব বেশি রান করতে পারেননি। শাহবাজ তার প্রথম ওভারেই তুলে নেন যশস্বীকে। সেটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ১২তম ওভারে পরাগ এবং অশ্বিনের উইকেট তোলেন। এক ওভারে দু’টি উইকেট নিয়ে হায়দরাবাদকে জয়ের সরণিতে নিয়ে আসেন।
কদিন আগেই ভারতের মাটিতে স্বাগতিকদের হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্যাট কামিন্স। এবার আরেকটি ফাইনালে আরেকটি শিরোপার সামনে অজি এই পেসার। তার নেতৃত্বে শিরোপার স্বপ্ন দেখছে হায়দরাবাদও।