ঘূর্ণিঝড় আইলার মতোই ভয়ঙ্কর হবে রেমাল। ঘূর্ণিঝড় আইলার সঙ্গে অনেকটা মিলও রয়েছে রেমালের। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও বেশি রয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর। রোববার (২৬ মে) সকাল থেকে রেমালের প্রভাব শুরু হবে। দুপুরে প্রবল ঘূর্ণিঘড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানতে পারে রাতে।
এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ৫ ফুটের অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর।
শনিবার (২৫ মে) রাতে আবাহাওয়ার বিশেষ বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টি ধারণার চেয়ে একটু বেশি শক্তিশালী হতে পারে। অতীতে আমফান ও আইলাও ঠিক মে মাসের শেষ দিকে সংঘটিত হয় এবং ওই দু’টি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষতি করে গেছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় রেমাল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা থেকে ৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
অপর দিকে শনিবার সন্ধ্যায় মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের জন্য ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় রেমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৯.৪০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৫° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি শনিবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত (পুন:) ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত (পুন:) ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঘূর্ণিঝড়টি আরও শক্তিশালী হলে সতর্ক সংকেতও পরিবর্তন করা হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারিবর্ষণ (২৮৯ মিমি) হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।