ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব: ত্রাণ ও পুনর্বাসনে তৎপর হতে হবে

সম্পাদকীয়

দেশের উপকূলে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। এতে কোনো কোনো স্থানে নষ্ট হয়েছে জমির ফসল, শাকসবজি ও মাছের ঘের। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, এ ঝড় ‘আইলা’র মতো বিধ্বংসী ও ধ্বংসাত্মক হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রচণ্ডতা দেখে সরকার তাই আগে থেকেই বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করেছিল। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশেই কমানো সম্ভব হয়েছে। কোনো ঘূর্ণিঝড়ের পর ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পেতে কয়েকদিন লেগে যায়; তাই প্রকৃত চিত্র জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। যে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই সরকার উপকূলীয় এলাকার মানুষের সুরক্ষায় ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে, এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় কর্মকাণ্ড। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস এখনো স্থানীয়দের অনেকে যথাযথভাবে আমলে নেন না, ফলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে উপকূলীয় এলাকার মানুষকে আরও সচেতন হবে।

আমরা নিকট অতীতে দেখেছি, ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকায় দুর্বল বাঁধের কারণে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এবার রেমালের আঘাতেও অনেক বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে প্লাবিত হয়েছে বিপুল এলাকা। দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় টেকসই মানের বাঁধ না থাকাই এর অন্যতম কারণ। কাজেই আগামীতে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এজন্য দুর্নীতি রোধ করাটাও প্রয়োজন। রেমালের আঘাতে দেশের বৃহৎ একটি অংশজুড়ে বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। দ্রুত এসব মেরামতের প্রস্তুতি নিতে হবে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চলের মানুষের কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিশ্চিত হয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্গত মানুষের জন্য বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে গুরুত্ব দিতে হবে। ঘরবাড়ি হারিয়েছেন যারা, তাদের জন্য দ্রুত আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ বা বন্ধ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে পূর্বপ্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব। যেমন, উপকূলীয় অঞ্চলের প্যারাবন (ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট) কোনোভাবেই ধ্বংস করা চলবে না। অধিকন্তু নতুন নতুন সবুজায়নের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। বেড়িবাঁধগুলোকে যোগাযোগের অবকাঠামো হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোর সংখ্যা ও মান বৃদ্ধি করতে হবে। সিগন্যালিং সিস্টেমের উন্নতি ঘটাতে হবে। পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর স্থানীয় প্রশাসনে বছরব্যাপী খাদ্য মজুত থাকতে হবে, যাতে যে কোনো সময়ে দুর্যোগ ঘটলে বাইরে থেকে ত্রাণ আসার পূর্বেই স্থানীয় পর্যায় থেকে মানুষের ক্ষুধা মেটানো যায়। সবশেষে বলতে চাই, ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ এই শ্লোগানকে হৃদয়ে ধারণ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার উপকূলীয় এলাকার মানুষের সহযোগিতায় প্রশাসনের পাশাপাশি এনজিওগুলো ও বিত্তবানরাও এগিয়ে আসবেন, এটিই প্রত্যাশা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামীতে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব ঘটবে এবং এর মাত্রা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের উচিত এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া।

শেয়ার করুন