টানা আট মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন চলছে। ইসরায়েল যেকোনও মূল্যে হামাসকে নির্মূল করতে চায়। অন্যদিকে পাল্টা প্রতিরোধে গাজায় এখনও অবস্থান ধরে রেখেছে হামাস। এর মধ্যে চলছে যুদ্ধবিরতির আলোচনাও। হামাস বলছে, যুদ্ধের পরও তারা গাজায় থাকবে। তবে গাজায় হামাসের শাসন আর কোনোভাবেই মেনে নেবে না ইসরায়েল। এমন ঘোষণাই দিয়েছে আগ্রাসী এই দেশটি।
সোমবার (৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় হামাসের শাসন আর মেনে নেবে না এবং হামাসের বিকল্প কারা হতে পারে সেটি তারা (ইসরায়েল) পরীক্ষা করছে বলে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট জানিয়েছেন। তার এই বক্তব্যকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করার আরও একটি ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট রোববার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদক্ষেপগুলো পরিচালনা করার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা বাহিনী হামাসের বিকল্প শাসক খুঁজে বের করার বিষয়টি মূল্যায়ন করছে।’
গ্যালান্ট বলেছেন, ‘আমরা একের পর এক এলাকা বিচ্ছিন্ন করব, সেই এলাকাগুলো থেকে হামাস সদস্যদের সরিয়ে দেব এবং এমন একটি বাহিনী তৈরি করব যা (হামাসের) একটি বিকল্প সরকার গঠন করতে পারবে এবং বিকল্প সেই সরকার হামাসের জন্যও হুমকি হবে।’
ইসরায়েলি এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘একদিকে সামরিক পদক্ষেপ, অন্যদিকে সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। চলমান যুদ্ধের এই দুটি লক্ষ্য আমাদের সামগ্রিক লক্ষ্য অর্জনের দিকে পরিচালিত করবে: (আর তা হলো) হামাস সরকার এবং এর সামরিক শক্তিকে ধ্বংস করা এবং বন্দিদের ফিরিয়ে আনা। যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে আমরা গাজায় হামাসের শাসন কোনো পর্যায়েই মেনে নেব না।’
এর আগে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত শুক্রবার একটি প্রস্তাব সামনে আনেন। বাইডেনের এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শুরু হবে। যেখানে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সরে যাবে।
চুক্তি অনুযায়ী, পরবর্তীতে সব বন্দিদের মুক্তি, শত্রুতা ও সংঘাতে স্থায়ী অবসান এবং ব্যাপকভাবে গাজা পুনর্নির্মাণ পরিকল্পনার মতো বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন ওই প্রস্তাবটি ঘোষণা করার পরে সেটি মেনে নিতে ইসরায়েলের সরকারের ওপর ইতোমধ্যেই চাপ বাড়ছে। অবশ্য ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা শাসন করা হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই প্রস্তাবটির বিষয়ে ‘ইতিবাচকভাবে’ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
এদিকে রোববার রাতে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আর সেখানে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গৃহীত হলে ইসরায়েলের অতি-ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এবং জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বেন-গভির বলেছেন, ‘এই চুক্তি … মানে যুদ্ধের সমাপ্তি এবং হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্য পরিত্যাগ করা। বেপরোয়া এই চুক্তিটি হবে সন্ত্রাসবাদের বিজয় এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্য এটি নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করবে।’
নেতানিয়াহুর ডানপন্থি জোট সংসদে একটি ছোটখাটো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আছে। বেন-গভিরের ওটজমা ইয়েহুডিত (ইহুদি শক্তি) পার্টির ছয়টি আসন রয়েছে। আর স্মোট্রিসের ধর্মীয় জায়োনিজম পার্টির রয়েছে মাত্র সাতটি আসন। তারা ক্ষমতায় থাকতে জোটবদ্ধ হিসেবে সংসদে রয়েছে।
অপরদিকে, ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিরোধী রাজনীতিবিদদের একজন ইয়ার ল্যাপিড। এই সংকটে তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তার সমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তার দল ইয়েশ আতিদ ২৪টি আসন নিয়ে সংসদে রয়েছে। রাজনীতিতে যাদের ভবিষ্যতও বেশ ভালো।
তিনি বলেছেন, ‘বেন-গভির এবং স্মোট্রিস সরকার ছেড়ে দিলে জিম্মি চুক্তির জন্য নেতানিয়াহুর জন্য আমাদের সমর্থন আছে।’