প্রসঙ্গ: ঋণখলাপিদের ধরতে দৃঢ় অর্থমন্ত্রীর সংকল্প

সম্পাদকীয়

খেলাপি ঋণ
প্রতীকী ছবি

দীর্ঘদিন ধরে দেশের ব্যাংক খাতে নানা সমস্যা বিরাজ করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রধান সমস্যা হলো উচ্চ খেলাপি ঋণ। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বস্তুত খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংক খাতে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই সৃষ্টি করছে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপির প্রভাব পড়ছে ঋণ ব্যবস্থাপনায়। এ কারণে এগোতে পারছেন না ভালো উদ্যোক্তারা। ফলে বাড়ছে না বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। কাজেই খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। বিগত সময়ে দেখা গেছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঋণ পুনঃতফসিল, ঋণ অবলোপন ইত্যাদির মাধ্যমে ঋণখেলাপির দায় থেকে মুক্ত থেকেছেন। এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি, বরং তা ঋণ আদায় প্রক্রিয়াকে আরও প্রলম্বিত করেছে। তাই খেলাপি ঋণসহ ব্যাংক খাতের সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

সম্প্রতি সাংবাদিকদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, ‘এখন ঋণখেলাপিদের ধরতে হবে, আমি ধরতে চাই।’ দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সরাসরি মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেছেন। দেশের আর্থিক খাতের জন্য এটি একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করছে অবশ্যই। আমরা তার এ বক্তব্যের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। যদিও, পূর্ববর্তী সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বলেছিলেন, ‘ব্যাংকের টাকা জনগণের টাকা, এ টাকা নিলে ফেরত দিতে হবে। দেশের জনগণের টাকা বেহাত হোক বা ফেরত না আসুক, এটি চাইতে পারি না। সরকারি বা বেসরকারি যে ব্যাংক থেকেই ঋণ নেওয়া হোক না কেন, ঋণের অর্থ ফেরত দিতে হবে।’ তিনি এমন কথাও বলেছিলেন যে, খেলাপি ঋণ আদায়ের সময় আত্মীয়স্বজন চেনা যাবে না। পাশাপাশি ভালো ঋণগ্রহীতাদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।’ খেলাপি ঋণের বিষয়ে এ দৃঢ় অবস্থানের জন্য তখন আমরা তাকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে বা খেলাপি ঋণ আদায়ে তাকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি; বরং খেলাপি ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে নানা রকম ছাড় দিতে দেখেছি। বর্তমান অর্থমন্ত্রী তার কথার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন- এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন