২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি দেশের ১৮তম অর্থমন্ত্রী। আবুল হাসান মাহমুদ আলী অর্থমন্ত্রী হিসেবে এবারই প্রথম বাজেট পেশ করবেন। এটি দেশের ৫৩তম বাজেট। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতি বছরই বাজেটের আকার বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আগামী অর্থবছরের বাজেট দেশের সবচেয়ে বড় বাজেট হতে যাচ্ছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার বাড়লেও ঘাটতির পরিমাণ কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি কম ধরা হচ্ছে ৫ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। তবে অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, আগামী অর্থবছর ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে।
ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বৈদেশি ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি, যার ৭২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এবং ৬৪ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেওয়া হবে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয় ধরা হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর ধরা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। আর দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এবার মূলধন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩৭ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্কিমে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হচ্ছে ৭ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (এডিপি বহির্ভূত) ও স্থানান্তরে ২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১৯৭২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যে সব অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাজেট দিয়েছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত ও এম সাইফুর রহমান। এই দুজনই ১২ বার করে জাতির সামনে বাজেট পেশ করেছেন।
প্রয়াত অর্থমন্ত্রী মুহিত প্রথম বাজেট দেন ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরের জন্য। এরপর ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে বাজেট পেশ করেন তিনি। আর ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত টানা ১০ বার বাজেট পেশ করেন মুহিত।
অপরদিকে এম সাইফুর রহমান ১৯৮০-৮১, ১৯৮১-৮২, ১৯৯১-৯২, ১৯৯২-৯৩, ১৯৯৩-৯৪, ১৯৯৪-৯৫, ১৯৯৫-৯৬, ২০০২-০৩, ২০০৩-০৪, ২০০৪-০৫, ২০০৫-০৬, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে বাজেট পেশ করেন।
এছাড়া তাজউদ্দীন আহমেদ ১৯৭২-৭৩, ১৯৭৩-৭৪ ও ১৯৭৪-৭৫, ড. আজিজুর রহমান ১৯৭৫-৭৬, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৬-১৯৭৭, ১৯৭৭-৭৮ ও ১৯৭৮-৭৯, ড. এম এন হুদা ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন।
এম সায়েদুজ্জামান ১৯৮৪-৮৫, ১৯৮৫-৮৬, ১৯৮৬-৮৭ ও ১৯৮৭-৮৮, মেজর জেনারেল এম এ মুনিম ১৯৮৮-৮৯ ও ১৯৯০-৯১, ড. ওয়াহিদুল হক ১৯৮৯-৯০, শাহ্ এএমএস কিবরিয়া ১৯৯৬-৯৭, ১৯৯৭-৯৮, ১৯৯৮-৯৯, ১৯৯৯-২০০০, ২০০০-০১ ও ২০০১-০২ এবং ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাজেট পেশ করেন।
বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর আগে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন।