টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ : ফারুকি-রশিদের বোলিংয়ে আফগানদের বড় জয়

মত ও পথ ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে চমক দেখিয়ে সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছিল আফগানিস্তান। যদিও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাদের। তবে উন্নতির ছাপ ছিল লক্ষ্যণীয়। সেই ধারা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বজায় রেখেছে তারা। উগান্ডাকে হারিয়ে আসর শুরু করা দলটি দ্বিতীয় ম্যাচেই পরাশক্তি নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে জন্ম দিয়েছে অঘটনের।

আগের দিনই আফগানিস্তানের বোলিং লাইন আপকে বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা বলেছিলেন কিউই অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন। সেই ভয়ই যেন কাবু করে ফেলল! গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে তাদের ৮৪ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে আফগানিস্তান।

universel cardiac hospital

টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ১৫৯ রানের সংগ্রহ জমা করে আফগানরা। সেই রান তাড়া করতে গিয়ে ৭৫ রানেই গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। টি-টোয়েন্টিতে এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ।

কিউইদের গুঁড়িয়ে দেওয়ার শুরুটা করেন ফজল হক ফারুকি। ইনিংসের প্রথম বলেই দুর্দান্ত ইনসুইংয়ে বোল্ড করেন ফিন অ্যালেনকে। পরের ওভারে বাঁহাতি এই পেসারের স্লোয়ারে ধোঁকা খান আরেক ওপেনার ডেভন কনওয়ে। ইব্রাহীম জাদরানের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিলিয়ে আসেন নিজের উইকেট। পাওয়ার প্লেতে ফারুকির শেষ শিকার হন ড্যারিল মিচেল। খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন।

ফারুকির বেঁধে দেওয়া সুর এরপর টেনে নিয়ে যান অধিনায়ক রশিদ খান। বোলিংয়ে এসে তিনিও পান প্রথম বলে উইকেটের দেখা। তাতে অদ্ভুত এক হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়েন তিনি। কেননা আগের ম্যাচে উগান্ডার বিপক্ষে নিজের শেষ দুই বলে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন এই লেগ স্পিনার। আজকের ম্যাচে প্রথম বলেই উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে পূরণ করলেন হ্যাটট্রিক। নবম ওভারে জোড়া আঘাত হেনে আফগানদের জয়ের স্বপ্ন দেখাতে থাকেন রশিদ। পরপর দুই বলে তিনি ফিরিয়ে দেন মার্ক চ্যাপম্যান ও মাইকেল ব্রেসওয়েলকে।

খাদের কিনারায় পড়ে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের সবচেয়ে বড় হারটি মাথা পেতে নিতে ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষা। ১৬তম ওভারে ফারুকির ওভারে হেনরি ফিরলে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। নিউজিল্যান্ডের গ্লেন ফিলিপসের ১৮ ও ম্যাট হেনরির ১২ রান ছাড়া আর কোনো ব্যাটারই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।

আফগানিস্তানের হয়ে ফারুকি ও রশিদ দুজনেই ১৭ রানে শিকার করেন চারটি করে উইকেট। অবিস্মরণীয় জয়ের অর্ধেক গল্পটা তাদের হলেও বাকি অর্ধেক গল্পের রূপকার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ৮০ রানের দারুণ এক ইনিংসের ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতে নেন এই ওপেনার।

আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ১০ ওভারে আফগানিস্তান পায় কেবল ৫৫ রান। তবে কোনো উইকেট না হারানোয় বরং স্বস্তিতে ছিল তারা। দুই ওপেনারকে ফেরানোর বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। এর মধ্যে ইব্রাহীমের ক্যাচ ছাড়েন ফিন অ্যালেন ও উইলিয়ামসন।

দুর্দান্ত খেলা গুরবাজ ফিরতে পারতেন ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই। মিচেল স্যান্টনারের বল স্টাম্পে লাগলেও বেল না পড়ায় কপালগুণে বেঁচে যান ডানহাতি এই ওপেনার। সেই সুযোগের সদ্বব্যবহার করতে অবশ্য ভোলেননি। ইব্রাহীমকে নিয়ে গড়ে তোলেন শতরানের জুটি। এর আগের ম্যাচে শতরান এসেছিল তাদের জুটি থেকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো উদ্বোধনী পরপর দুই ম্যাচে শতরানের দেখা পেল।

১৫তম ওভারে এসে ১০৩ রানের সেই জুটি ভাঙেন ম্যাট হেনরি। তার বলে বোল্ড ৪৪ রানে সাজঘরে ফেরেন ইব্রাহীম। এরপর একপ্রান্তে আসা-যাওয়ার মিছিলের মাঝেও নিজের লড়াই চালিয়ে যান গুরবাজ। আসরে দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেওয়া এই ব্যাটার থামেন শেষ ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের শিকার হয়ে। তার আগে ৫৬ বলে ৫টি করে চার ও ছক্কায় ৮০ রানের দারুণ ইনিংস উপহার দেন তিনি। আফগানদের হয়ে আজমউতউল্লাহ ওমরজাইয়ের (২২) পর আর কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেনি। কিউইদের হয়ে সর্বোচ্চ দুটি করে উইকেট শিকার করেন বোল্ট ও হেনরি। এছাড়া একটি শিকার লকি ফার্গুসনের। এরপর কে ভেবেছিল আফগান বোলিংয়ের সামনে এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং।

শেয়ার করুন