টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি। দেশটির রাজধানী নয়দিল্লিতে এসেছেন দেশি-বিদেশি প্রায় ৮ হাজার অতিথি। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা আছেন।
মোদি ও তাঁর মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে নতুন দিল্লি। তিন স্তরের নিরাপত্তার সব থেকে বাইরের স্তরে থাকবে দিল্লি পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনী।
দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তায় থাকছেন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমান্ডোরা। সবচেয়ে ভেতরের বলয়ে থাকবেন গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত এসপিজি।
মোদির শপথে যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালসহ সাতটি দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
গতকাল দুপুর থেকেই তাদের গমন শুরু হয়। সবার আগে নতুন দিল্লি পৌঁছান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সার্বিকভাবে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দিল্লির বড় বড় হোটেলে থাকবেন তাঁরা। সেই হোটেলগুলোর সামনেও কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার বিকাল থেকেই রাষ্ট্রপতি ভবনের আশেপাশের এলাকাকে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করে নতুন দিল্লি প্রশাসন।
এর আগে শুক্রবার রাজধানী দিল্লিতে পুরাতন সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয় এনডিএর সংসদীয় দলের বৈঠক। যেখানে টানা তৃতীয় মেয়াদে মোদিকে জোটের নেতা এবং টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য নির্বাচিত করেছে এনডিএর সদস্য দলগুলো।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার, অন্ধ্রপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথসহ শরিক দলের প্রধান এবং এনডিএ শাসিত রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরাও উপস্থিত ছিলেন সংসদে।
বৈঠকে এনডিএর নেতা হিসেবে মোদির নাম প্রস্তাব করেন রাজনাথ সিং। পরে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এসময় সেখানে ‘মোদি, মোদি’ রব ওঠে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে ১ জুন। গত ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ৪৭ দিনে সাত দফায় অনুষ্ঠিত হয় ৫৪৩টি লোকসভা আসনের এই নির্বাচন। গত ৪ জুন যার ফলাফল ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ২৪০টি আসনে জয়লাভ করেছে। অন্যদিকে জোট হিসেবে এনডিএর মোট আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯২টিতে। ফলে সরকার গঠনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) এবং অন্ধ্রপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) সমর্থন প্রয়োজন ছিলো বিজেপির।
গত বুধবার নতুন সরকার গঠন করতে নীতিশ-নাইডুসহ নিজেদের রাজনৈতিক জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) শরিকের সমর্থন পায় বিজেপি। একইসঙ্গে মোদিকে এনডিএ জোটের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। এর মাধ্যমে মোদির তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ সুগম হয়।
অন্যদিকে কংগ্রেস এককভাবে জিতেছে ৯৯টি আসনে আর ইন্ডিয়া জোটের আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৪টি। সুতরাং জোট শরিকরা বিদ্রোহ না করলে মোদি আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন তা নিশ্চিত ছিল।
প্রসঙ্গত, মোদি তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলে কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরুর কাতারে পৌঁছে যাবেন। জওহরলাল নেহরু টানা তিন মেয়াদে ১৭ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
অন্যদিকে গতকাল রাহুল গান্ধীকে লোকসভায় বিরোধী দলনেতা করার প্রস্তাব পাস করেছে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। মোদির বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে একমাত্র মুখ যে রাহুল গান্ধী সেটা কার্যত প্রমাণ হয়ে গেছে। দলের ৯৯টি আসন জয়ের জন্য রাহুল গান্ধীকেই কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাই তাকে এই পদ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি।
তবে রাহুল গান্ধী বলেছেন, দায়িত্ব নেবেন কি না তা ভেবে জানাবেন।
এদিকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) এবং অন্ধ্রপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) সমর্থনই সরকার গঠন করছে বিজেপি। আর সেই সুযোগে মোদির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা, অভিন্ন কর্মসূচি চান চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতিশ কুমার।
মন্ত্রণালয় দাবির ক্ষেত্রে নীতিশকে পিছনে টপকে গেছেন চন্দ্রবাবু। তিনি পাঁচটি মন্ত্রণালয় চান। তার মধ্যে আছে গ্রামোন্নয়ন, জলসম্পদ, স্বাস্থ্য, সড়ক পরিবহন, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদ। আর নীতীশের চাহিদার মধ্যে আছে রেল, গ্রামোন্নয়ন, কৃষি মন্ত্রণালয়।