ইরানের ১৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য চূড়ান্তভাবে ৬ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিল। প্রার্থীরা হলেন- মাসুদ পেজেশকিয়ান, মোস্তফা পুরমোহাম্মাদী, সাঈদ জালিলি, আলী রেজা যাকানি, আমির হোসেন কাজীজাদেহ হাশেমি ও মোহাম্মদ বাকের কলিবফ।
রোববার (৯ জুন) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ছয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ৮০ জন রাজনীতিবিদ নিবন্ধন করেছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে এই ছয় জনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায় গার্ডিয়ান কাউন্সিল।
প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
১. মাসুদ পেজেশকিয়ান- সংসদ সদস্য ও মোহাম্মদ খাতামির শাসনামলের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা মন্ত্রী।
২. মোস্তফা পুরমোহাম্মাদী- হাসান রুহানির সরকারের বিচারমন্ত্রী ছিলেন।
৩. ড. সাঈদ জালিলি- ইরানের সাবেক প্রধান পরমাণু আলোচক এবং ইরানের নীতি নির্ধারণী পরিষদ সদস্য। তিনি ১৩তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।
৪. আলী রেজা যাকানি- তেহরানের মেয়র ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। তিনিও ইব্রাহিম রায়িসির প্রতি সমর্থন জানিয়ে গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান।
৫. সাইয়্যেদ আমির হোসেন কাজিজাদে হাশেমি- একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
৬. মোহাম্মদ বাকের কলিবাফ- তেহরানের সাবেক মেয়র ও ইরানের পার্লামেন্টের বর্তমান স্পিকার।
এদিকে পশ্চিমাদের কড়া সমালোচনার জন্য পরিচিতি সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদের প্রার্থিতা এবারও বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালেও তিনি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। সেসময় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তাকে নিষেধ করেছিলেন। তবে খামেনির নিষেধ অমান্য করেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধন করেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে নির্বাচনে দাঁড়াতে দেয়নি দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিল।
২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন আহমেদিনেজাদ।
এছাড়া সংসদের সাবেক স্পিকার মধ্যপন্থি নেতা আলি লারিজানি, সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির অধীনস্থ ভাইস প্রেসিডেন্ট এসহাক জাহাঙ্গিরি এবং রেভ্যুলুশনারি গার্ডসের সাবেক কমান্ডার ভাহিদ হাঘানিয়ানের প্রার্থিতাও অনুমোদন পায়নি৷
অন্যদিকে এবার প্রেসিডেন্ট হতে আবেদন করেছিলেন চার নারী। তবে কারো আবেদন অনুমোদন করা হয়নি। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিদ্রোহের পর থেকেই অনেক নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চেয়েছেন তবে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
গত ১৯ মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু নিশ্চিতের পরপরই আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে ইরান।
ইরানের সংবিধানের ১৩১ ও ১৩২ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনো প্রেসিডেন্ট মৃত্যুবরণ করলে অথবা দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে সর্বোচ্চ ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে।
ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচন আয়োজন ও পরিচালনার মূল দায়িত্ব পালন করে থাকে। তবে দেশটিতে কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন, কে পারবেন না, সেটি নির্ধারণ করে ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে গঠিত ‘গার্ডিয়ান কাউন্সিল’। এই কাউন্সিলের সদস্যদের নিয়োগ দেন ইরানি সর্বোচ্চ নেতা।
গত ৩০ মে থেকে শুরু হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রার্থী নিবন্ধন, যা ৪ জুন পর্যন্ত চলে। আগামী ১২ জুন থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে এবং ২৭ জুন পর্যন্ত তা চলবে। আগামী ২৮ জুন শুক্রবার ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র: ইরনা, পার্সটুডে