পাওয়ারপ্লে শেষের পরেও জয়ের সম্ভাব্যতায় দেখানো হয়েছিল পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনা ৯২ শতাংশ। ব্যাটে-বলে সমান রান দরকার ছিল জয়ের জন্য। ১২ ওভারে ৭২ রান করে সেই লক্ষ্যে ঠিকই টিকে ছিল তারা। পরের ৩০ বল থেকে উঠেছে মোটে ১৭ রান। উইকেট হারিয়েছে ৩টি। নাসাউ কাউন্টির বোলিং সহায়ক পিচে আরও একবার দেখা গেল বোলারদের কারিশমা।
পাকিস্তান কেন আনপ্রেডিক্টেবল, তা গতকাল রাতে বোঝা গেল আরও একবার। ১২০ রানের ক্ষুদ্র টার্গেটে এসেও পাকিস্তানকে থামতে হয়েছে ১১৪ রানে এসে। ৬ রানের এই অবিশ্বাস্য হারে পাকিস্তানের বিদায়টাও প্রায় অনিবার্য হয়ে পড়েছে এবারের বিশ্বকাপ থেকে। হার্দিক পান্ডিয়া-জাসপ্রিত বুমরাহরা ভারতকে এনে দিয়েছেন মনে রাখার মতো এক জয়। এটি ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম রান ডিফেন্ড করে জয়। একইসঙ্গে পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে কম রানতাড়ার হার।
ইনিংসের ১৯তম ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহ করেছেন স্মরণীয় এক ডেথ ওভার। জয়ের ক্ষণিক আশাও পাকিস্তান হারিয়ে ফেলে সেখানেই। ১৯তম ওভারে এসেছে মোটে ৩ রান। শেষ ওভারে বাকি ১৮ রান তোলা হয়নি গ্যারি কার্স্টেন শিষ্যদের। আর্শদ্বীপ সিংয়ের ওভারের প্রথম বলে আউট হলেন ইমাদ ওয়াসিম। পরের ৫ বলে তারা নিয়েছে ১০ রান। এই নিয়ে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৮ম ম্যাচের মধ্যে ৭ম পরাজয়ের স্বাদ পেল পাকিস্তান।
অথচ ৮০ রানেও ৩ উইকেট হারানো পাকিস্তান ছিল জয়ের কক্ষপথে। সেখান থেকেই একের পর এক ডট বল পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। রিজওয়ানের উইকেট কার্যত ভারতকে জয়ের সুবাস এনে দেয়। পাকিস্তানের হয়ে সেসময় শাদাব খান, মোহাম্মদ ইফতিখারের মতো প্রতিষ্ঠিত ব্যাটাররা দলে থাকলেও ম্যাচে আর ফেরাই হয়নি পাকিস্তানের।
১২০ রানের লক্ষ্যে নেমে পাকিস্তানের শুরুটা মোটেই মন্দ হয়নি। প্রথম চার ওভারেই ২১ রান তোলে বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানের জুটি। বাবর ফেরেন পাওয়ারপ্লে শেষের আগেই। বুমরাহর গুডলেন্থের বলটা ছেড়েই দিতে চেয়েছিলেন। তবে ব্যাটে লেগে ক্যাচ চলে যায় স্লিপে।
রিজওয়ানের পরের সঙ্গী উসমান খান। দুজনের রান তোলার গতি ধীর হলেও পাকিস্তান কক্ষপথ থেকে ছিটকে যায়নি কখনোই। ১০ ওভারে তাদের ৫৭ রানও নাসাউ কাউন্টির উইকেটে ছিল যথেষ্ট। তবে বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়াদের পরিকল্পনা ছিল অন্যরকম। একের পর এক স্লোয়ার এবং ভ্যারিয়েশন দিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করেছেন।
ফখর জামানও আউট হয়েছিলেন এমনই বাড়তি বাউন্সের স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে। রিজওয়ানও পরাস্ত হন সেই স্লোয়ারেই। পাকিস্তানকে এরপর ম্যাচে ফেরার আর সুযোগই দেয়নি ভারত। শেষ ওভারে নাসিম শাহের দুই চার কেবল পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ভারতও সুবিধা করতে পারেনি কোনোক্রমেই। বরং মোহাম্মদ আমির, নাসিম শাহ এবং হারিস রউফদের বোলিং তোপে মাত্র ১১৯ রানেই গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস। তাতে ভারতও দেখেছিল লজ্জার কিছু রেকর্ড। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটি ছিল তাদের চতুর্থ সর্বনিম্ন স্কোর। আর অলআউট হওয়া ইনিংসে এটি দ্বিতীয়। প্রথম ব্যাট করে বিশ্বকাপে এত কম রানে কখনোই অলআউট হয়নি তারা।
বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা থেকে শুরু করে সুর্যকুমার যাদব কিংবা শিভাম দুবে, মোটাদাগে ব্যর্থ সবাই। খেললেন কেবল ঋষভ পান্ত। তার ৪২ রানটাই ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মাঝে বড় প্রাপ্তি। শেষদিকে আর্শদ্বীপ সিং রান করায় ভারতের রান গিয়েছে ১১৯ পর্যন্ত। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পক্ষেই বাজি ধরার লোক ছিলেন বেশি।
কিন্তু ভারতীয় বোলারদের দুর্দান্ত বোলিং আর পাকিস্তানি ব্যাটারদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত আর জয় পাওয়া হয়নি ম্যান ইন গ্রিনদের। নিউইয়র্কে আরও একবার ভারতের কাছে হতাশ হতে হলো পাকিস্তানের ক্রিকেট ভক্তদের।