ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ। এ বিদ্যুতের জন্য বছরে প্রয়োজন প্রায় ১৩০ কোটি টাকা। চলতি বছরেই নেপালের বিদ্যুৎ দেশে চলে আসবে বলে আশা করছে বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অবলম্বন করে এ বিদ্যুৎ কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য পাঁচ বছরের চুক্তি করা হবে। এতে নেপালের বিদ্যুতের জন্য পাঁচ বছরে ব্যয় হবে ৬৫০ কোটি টাকা।
সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে এরই মধ্যে নীতিগত অনুমোদ দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর প্রেক্ষিতে বাবিউবো আন্তর্জাতিক ক্রয় প্রস্তাব ইস্যু করলে নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (এনইএ) এবং ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভাইপার নিগম লিমিটেড (এনভিভিএন) প্রস্তাব দাখিল করে।
সূত্রটি আরও জানায়, পিইসি প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে আলোচনার মাধ্যমে সুপারিশ করা দর প্রস্তাবে নেপাল থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয়ে ৫ বছরের জন্য চুক্তির পরিকল্পনা নিয়েছে। চুক্তির বিষয়টি মঙ্গলবার (১১ জুন) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থান করা হবে। মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিলে খুব দ্রুতই চুক্তি সম্পন্ন করা হবে এবং দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে নেপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে চলে আসবে।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার ক্ষেত্রে ভারতের মোজাফফরবাদ সাবস্টেশনে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৪০ ইউএস সেন্ট। এনভিভিএন ট্রেডেং মার্জিন হবে দশমিক শূন্য ৫৯৫ ভারতীয় রূপি। আর ট্রান্সমিশন চার্জ হবে ভারতের সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন (সিইআরসি)-এর নিয়ম অনুযায়ী।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনা এখন সময়ের ব্যাপার। ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ৫ বছরের চুক্তি করা অনুমোদন পেতে মঙ্গলবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থান করা হবে। মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিলে আমরা ১৫-২০ দিনের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন করবো। এ জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে প্রতি বছর আনুমানিক ১৩০ কোটি টাকা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ৫ বছরে ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে আমরা ধরে নিচ্ছি। ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ হয় তো পরিমাণে কম। কিন্তু এর মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা হবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য দেশ থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির পথ খুলবে।
যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, নেপালের বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে মঙ্গলবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থান করা হবে। মন্ত্রিসভা কমিটি এদিন অনুমোদন দিলে এ মাসের মধ্যে চুক্তি হবে। চুক্তি সই হলে আরও মাস খানেক সময় লাগবে। আমরা আশা করছি এক-দুই মাসের মধ্যে নেপালের বিদ্যুৎ চলে আসবে।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আসলে আমরা কী ধরনের সুবিধা পাবো? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা মাত্র ৪০ মেগাওয়াট। ৪০ মেগাওয়াট হলো সাগরের মধ্যে এক বালতি পানি ফেলার মতো। এটা হলো প্রতীকী, যাতে ভবিষ্যতে আরও বেশি জলবিদ্যুৎ আমরা আনতে পারবো নেপাল থেকে। সেটার একটা সম্ভাবনা হয়তো তৈরি হবে। আমার এখনকার চাহিদার তুলনায় এটা তেমন কিছু না।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ আমাদনির বিষয়ে গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী নেপালের ত্রিশুলি প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট এবং অন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬ মেগাওয়াটসহ মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে। ভারত হয়ে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে এ বিদ্যুৎ আসবে।
নেপালের এ বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে গত ১০ সেপ্টেম্বর বৈঠকে বসে ‘বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন ও আমদানি’ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওই কমিটির প্রধান ছিলেন। বৈঠকে আ হ ম মুস্তাফা কামাল নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ট্যারিফ জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দাম দেশে কয়লাভিত্তিক উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের তুলনায় কম পড়বে।
ওই বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে, নেপাল শীতকালে বাংলাদেশ কাছ থেকে বিদ্যুৎ নিতে আগ্রহী। শীতে নেপালে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে, অন্যদিকে বাংলাদেশে চাহিদা কম থাকে।