সারাদেশে গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারকে আরও ১৮ হাজার ৫৬৬টি বাড়ি হস্তান্তর করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (১১ জুন) বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন তিনি।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সুবিধাভোগীদের কাছে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়ার কথা শুনে উচ্ছ্বসিত সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর হস্তান্তরের সাজ সাজ আয়োজন করা হয়েছে। এ যেন ঈদুল আজহার আগে আরেক ঈদ আনন্দ।
সোমবার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর কচ্ছপিয়া গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় গৃহহীন ও ভূমিহীন ১৫০ পরিবারকে জমিসহ সেমিপাকা ঘর দেওয়া হবে। এ কারণেই জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠানস্থল সেজেছে নানা সাজে। চারদিকে ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা উক্তি শোভা পাচ্ছে তাতে। লাল সবুজের শাড়ি পরে উপকারভোগীদের অপেক্ষা বলে দিচ্ছে তাদের খুশির খবর।
শুধু ভোলার চরফ্যাশন নয়, সারাদেশে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পঞ্চম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬টি গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি তিনি ২৬ জেলার সব উপজেলাসহ আরও ৭০টি উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন মানুষ মুক্ত ঘোষণা করবেন। এর মধ্যে লালমনিরহাটে ১ হাজার ২৮২টি, কক্সবাজারে ২৬১টি এবং ভোলা জেলায় ১ হাজার ২৩৪টি বাড়ি হস্তান্তর করবেন। তাতে সারাদেশে জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৮টি এবং উপজেলা হবে ৪৬৪টি।
এ নিয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, মোট ৬৩৫৬ টি ঘর আমরা বরাদ্দ পেয়েছি। ১০০৫টি জরাজীর্ণ ঘর ,যেটি সংস্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ জুন) ভোলার জেলার মূলত চরফ্যাশন, বোরহানউদ্দিন ও মনপুরা উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে। ১২৩৪টি ঘর সরাসরি ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি বলেন, ভোলা একটি নদী ভাঙনকবলিত এলাকা। এখানে প্রতিনিয়ক মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়। তখন ভূমিহীন হয়ে পড়ে। সেসব নিঃস্ব, অসহায় মানুষকে যাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুর্নবাসন করা যায়, একই সঙ্গে আশ্রয়ণ প্রকল্পের যে মূল উদ্দেশ্য আমাদের সামাজিক সুরক্ষার যে মূল উদ্দেশ্য, সেগুলো কিন্তু এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের যারা উপকার ভোগে রয়েছেন, তাদেরকে সরকার নিশ্চিত করছে। বিভিন্ন প্রকার সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি যেখানে করা হয়েছে, সেখানে কিন্তু একটি সুন্দর মানসম্পন্ন পদক্ষেপ নেও্রযা হয়েছে। তাদের যে সন্তান রয়েছে, সেসব সন্তান যাতে আগামীর উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য উপযোগী হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য যাতে যথাযথভাবে শিক্ষা পায় সে বিষয়ে নজর দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সাংবাদিকদের কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহিন ইমরান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় জেলায় এর আগে গৃহ ও ভূমিহীনদের মধ্যে মোট ৪ হাজার ৬৬৬টি বাড়ি বিতরণ করা হয়েছে এবং আগামীকাল আরও ২৬১টি বাড়ি হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই ২৬১টি বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে গৃহ ও ভূমিহীন মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন।’
শাহিন ইমরান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প জেলার গৃহ ও ভূমিহীন মানুষকে শুধু আশ্রয়ই দেয় না, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম পর্যায়ের প্রথম ধাপে মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার ১২টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং আগামীকাল আরও ১৮ হাজার ৫৬৬টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেছিলেন।
প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত সারাদেশে ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯০৪ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের প্রায় ৪৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে আশ্রয়ণ এবং অন্যান্য কর্মসূচির আওতায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৩ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।