মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে আগামী ১৭ জুন। দেশে এদিন প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। সে উপলক্ষে জোরকদমে এগোচ্ছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দু-একদিনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে প্রস্তুতির সব কাজ।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ঈদুল আজহার প্রধান জামাতের সময়সূচি চূড়ান্ত করে ঘোষণা আসবে ঈদের আগের দিন। ধর্ম মন্ত্রণালয় সেই সূচি যথাসময়ে জানিয়ে দেবে।
তার আগে শুক্রবার (১৪ জুন) সকালে সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দান সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মূল গেটের জন্যে ঈদ মোবারক লেখা, গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকার বাম পাশে র্যাবের অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম, ডিবি কন্ট্রোল রুম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোল রুম ও চিকিৎসার জন্যে চিকিৎসকের বসার স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। নারীদের নামাজের স্থান, মোবাইল টয়লেট, মূল গেটের ওপরের গম্বুজ- এসব রং করারও কাজ চলছে। এছাড়া, মাঠের আশপাশে চলছে রং করা, কাপড় টানানো এবং লাইট-ফ্যান যুক্ত করার কাজ।
ঈদের দিন সকালে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঈদ জামাতে অংশ নেবেন। সেজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিগত বছরগুলোর মতো এবারও ঢাকা দক্ষিণ সিটির কাছ থেকে জাতীয় ঈদগাহের প্যান্ডেল নির্মাণের টেন্ডার পেয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিয়ারু সর্দার অ্যান্ড সন্স ডেকোরেটরের ব্যবস্থাপক মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে জামাতের জন্য পুরো ঈদগাহজুড়ে প্যান্ডেল টানানো শেষ হয়েছে। এখন সিলিং ফ্যান, লাইট ও মাইক লাগানোসহ অন্যান্য কাজ চলছে। মাঠের ভেতরে পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। তারপরে নামাজের জন্য কার্পেট বিছানো হবে। এখন সাড়ে আটশ লাইট, নয় শতাধিক সিলিং ফ্যান এবং একশর বেশি স্ট্যান্ড ফ্যান বসানোর কাজ চলছে।
এর আগে, গত বুধবার জাতীয় ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, বিচারপতিসহ ভিআইপিরা নামাজ পড়বেন। তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ মাঠ ঈদের জামাতের জন্য ১৬ জুনের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করা হবে।
মেয়র জানান, ৩৫ হাজার মুসল্লির ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য জাতীয় ঈদগাহ প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদুল আজহার প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তথ্য কর্মকর্তা (জনসংযোগ) মোহাম্মদ আবু নাসের বলেন, মাঠের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। বৃষ্টিতে যেন নামাজের বিঘ্ন না ঘটে, সেই ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। নারীদের জন্য আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মুসল্লিরা স্বাচ্ছন্দ্যে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ঈদগাহ মাঠের ভেতরে এয়ার কুলারের ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যাপ্ত ফ্যান ও লাইটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, খাবার পানি, ভিআইপি কাতারে জায়নামাজ, প্রাথমিক চিকিৎসা, ভ্রাম্যমাণ টয়লেট এবং বৃষ্টির পানিনিরোধক শামিয়ানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহে ভিআইপি, নারী ও পুরুষের প্রবেশের জন্য আলাদা তিনটি গেট করা হয়েছে।
জানা গেছে, জাতীয় ঈদগাহে ভিআইপি (পুরুষ) কাতার হবে পাঁচটি, ভিআইপি (নারী) একটি, জনসাধারণের মধ্যে ৬৫টি পুরুষ কাতার ও ৫০টি নারী কাতারসহ মোট ১২১টি কাতার হবে। ঈদগাহের অজুখানায় একসঙ্গে ১১৩ জন পুরুষ ও ২৭ জন নারী অজু করতে পারবেন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢেলে সাজানো হয়েছে ঈদগাহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ছাড়াও স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স-এসএসএফ এবং ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা সদস্যরা সেখানে দায়িত্ব পালন করবেন। রাস্তার আশপাশে বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
জানা গেছে, ঈদগাহে মূল প্রবেশ পথ থাকবে তিনটি। তবে জামাত শেষে বের হওয়ার জন্য উত্তরের দিকে আরও গেট খোলা হবে। এছাড়া, নারীদের জন্য মাঠের দক্ষিণ পাশে আলাদা প্রবেশপথ তৈরি করা হয়েছে।
ঈদের দিনে জাতীয় ঈদগাহকেন্দ্রিক চলাচলে ডিএমপির নির্দেশনা থাকবে এবং প্রধান ঈদ জামাত ঘিরে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের। ঈদ জামাত ঘিরে রাস্তা ডাইভারসন দেওয়া হবে, যাতে কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া মুসল্লিরা আসতে পারেন। নারীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের নারী পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি করবেন।