কোরবানির পশুর বর্জ্যব্যবস্থাপনার দিকে খেয়াল রাখা জরুরি

সম্পাদকীয়

পশুর চিকিৎসায় থাকবে আড়াই হাজার মেডিকেল টিম
কোরবানিযোগ্য পশু। ফাইল ছবি

প্রবৃত্তির দাসত্ব, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষসহ মনের পশুত্বকে পরাভূত করার শিক্ষা নিয়ে বছর পেরিয়ে আমাদের মাঝে সমবেত হয়েছে মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ‘ঈদুজ্জোহার চাঁদ হাসে ঐ এল আবার দুসরা ঈদ! কোরবানী দে, কোরবানী দে, শোন খোদার ফরমান তাগিদ…’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই কাব্যসুর আকাশ-বাতাস মন্দ্রিত করে মনপ্রাণ উজালা করে তুলছে ঈদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে। আল্লাহ তায়ালার প্রতি অপার আনুগত্য এবং তারই রাহে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের এক ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়ে আসছে। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে কোরবানির রেওয়াজ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। এই অনন্য ঘটনার স্মরণে কোরবানি প্রচলিত হয়। আমাদের মধ্যে আত্মত্যাগ ও আত্মদানের মানসিকতা সঞ্চারিত করে কোরবানি।

কোরবানির ত্যাগ আমাদের মধ্যে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব জাগ্রত করে এবং সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। আমরা আশা করব সমাজের বিত্তবান ও সচ্ছল ব্যক্তিরা কোরবানির এই শিক্ষাকে গ্রহণ করবেন এবং সমাজের দারিদ্রপীড়িত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা যাতে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবেন।

এতদ্ব্যতীত, পশু কোরবানির ক্ষেত্রে আমাদেরকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং বর্জ্যব্যবস্থাপনার দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। প্রতিবছরই পশু কোরবানির পরপরই আমাদের প্রধান চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বর্জ্য অপসারণ। এ বিষয়ে আমাদের সামান্য অসাবধানতার কারণে দেখা দিতে পারে পরিবেশগত নানান সমস্যা। মূলত কোরবানির পশুর বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলার কারণে তা পচে দুর্গন্ধ ছড়ানোর মাধ্যমে চারপাশের পরিবেশ দূষিত করে তুলে। শুধু তাই নয়, নালা বা নর্দমায় ফেলা বর্জ্য থেকে ছড়ায় নানা ধরনের রোগের জীবাণু। অতিরিক্ত বর্জ্যরে চাপে নর্দমা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। অল্প বৃষ্টিতেই নর্দমার পানি আটকে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তখন এসব বর্জ্য অপসারণ করতেও হিমশিম খেতে হয় সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভাকে।

বর্জ্য অপসারণ করার একটি অন্যতম উপায় হল কোরবানির আগেই বাড়ির আঙ্গিনা কিংবা পরিত্যক্ত জায়গায় একটা গর্ত খুঁড়ে রাখা। কোরবানির পর পশুর বর্জ্য সেখানে ফেলে মাটিচাপা দেয়া। তবে শহরাঞ্চলে গর্ত খোঁড়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে পানি ও গ্যাসের পাইপ, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের তার ইত্যাদি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কোরবানির সব কার্যক্রম শেষে রক্তমাখা রাস্তাঘাট ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। জীবাণু যেন ছড়াতে না পারে সেজন্য নোংরা জায়গা পরিষ্কারের সময় ব্লিচিং পাউডার বা জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের একটু সচেতনতা আর সঠিক পরিকল্পনাই এ সমস্যার সমাধান দিতে পারে।

শেয়ার করুন