ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যার ক্ষত শুকানোর আগেই সিলেটে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সবকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকাল ৯টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, সারিগোয়াইন, ধলাই ও লোভাছড়াসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকায় পানি প্রবেশের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বেশকিছু পরিবার এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।
এছাড়াও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে সোমবার বিকেল থেকে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমায় সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতাও কমতে শুরু করেছে।
পাউবো সিলেটের তথ্যমতে, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে একই দিন সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
কুশিয়ারা নদীর পানি মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।
এই নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সকাল ৯টায় তা আরও বেড়ে ৭৯ সেন্টিমিটারে পৌঁছায়।
সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপরে ছিল।
সারিগোয়াইন নদীর পানি মঙ্গলবার সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সকাল ৯টায় তা আরও বেড়ে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়াও সারি, সারিগোয়াইন, লোভাছড়া ও ধলাইসহ সবকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ১৫৩ মিলিমিটার। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪৪ মিলিমিটার।
অন্যদিকে, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘন্টায় ৩৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে দেশটির আবহাওয়া অফিস।
ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের মধ্যে কোরবানির পশুর মাংস, শুকনো খাবার ও ঈদসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
সোমবার রাতে জেলা প্রশাসন জানায়, বন্যা পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৬টি পরিবারের ২৩ জন, গোয়াইনঘাট উপজেলার ৬৭ পরিবারের ২৫২ জন, ওসমানীনগর উপজেলার ১০টি পরিবারের ৪৩ জন, বালাগঞ্জ উপজেলার তিন পরিবারের ১০ জন ও বিয়ানীবাজার উপজেলার চার পরিবারের ১৫ জন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
অন্য উপজেলাগুলোর কোনো বাসিন্দা এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান না করলেও পানিবন্দিদের মধ্যে কোরবানির পশুর মাংস, শুকনো খাবার ও ঈদসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।