বাংলাদেশের কাছে জঙ্গি বিমান, স্যাটেলাইট, টহল জাহাজসহ বিভিন্ন ধরনের সমরাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রিতে আগ্রহী ইতালি। সমরাস্ত্র বিক্রির পথ সুগম করতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চায় ইউরোপের দেশটি। আজ সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের আলোচনায় গুরুত্ব পেতে পারে বিষয়টি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই দেশের দ্বিতীয় রাজনৈতিক পরামর্শক সভা অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ইতালির পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মহাসচিব রিকার্ডো গুয়ারিগলিয়া নেতৃত্ব দেবেন।
গত মাসে ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ওই সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তার দেশ বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে সমরাস্ত্র বিক্রিসহ প্রযুক্তি হস্তান্তরে আগ্রহী। বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট দেওয়ার ব্যাপারেও ইতালির প্রস্তুতি আছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে রাজনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, অভিবাসন, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ইতালির পক্ষ থেকে বেশ কয়েক বছর আগেই প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতাবিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের প্রস্তাব দেওয়া আছে। দেশটি এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী। বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে ইতালি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিরক্ষার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইতালি বাংলাদেশের বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর কাছে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম বিক্রিতে আগ্রহী। ফ্রান্সের থালেস ও ইতালির লিওনার্দোর যৌথ প্রতিষ্ঠান থালেস অ্যালেনিয়া বাংলাদেশের কাছে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট বিক্রিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। উড়োজাহাজের পাশাপাশি নিরাপত্তা ও মহাকাশসামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লিওনার্দো উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের কথা বলছে। আর ইতালির জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান উপকূলীয় টহল জাহাজ বিক্রির পাশাপাশি প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে রিজার্ভের সংকটসহ আর্থিক কারণে নতুন কোনো প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে না। এমন এক পরিস্থিতিতে ইতালির সমরাস্ত্রের বিষয়ে এ মুহূর্তে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। আর প্রতিরক্ষাবিষয়ক এমওইউর ব্যাপারে প্রক্রিয়াগত বেশ কিছু বিষয় অসমাপ্ত থাকায় এখনই তা সই হবে না।
ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, দুই দেশের এই বৈঠকে নানা বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কর্মী পাঠানোর ব্যাপারে নিরাপদ ও নিয়মতান্ত্রিক অভিবাসনের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। দুই দেশের মধ্যে নিরাপদ অভিবাসন চালুর লক্ষ্যে ইতালি এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশকে একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া দিয়েছে। ওই খসড়া নিয়ে এবার আলোচনা হবে।
জানা গেছে, দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের আলোচনায় মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অবনতিশীল পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হবে। ইতালির প্রতিনিধিদলের একটি অংশ বৈঠকের পর কক্সবাজার সফরে যাবে।