অবশেষে মুক্তি পেলেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। যুক্তরাজ্যের একটি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরছেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে উইকিলিকসের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
ফৌজদারি অপরাধের দোষ স্বীকার করায় অ্যাসাঞ্জকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে।
উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের মার্কিন জেলা আদালতের তথ্য অনুযায়ী, ৫২ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জ মার্কিন জাতীয় প্রতিরক্ষার বেশ কিছু নথি ফাঁসের ষড়যন্ত্র করায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাজ্যের উচ্চ-নিরাপত্তাবেষ্টিত বেলমার্শ কারাগার থেকে মুক্তি পান জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। এরপর নিজ দেশের উদ্দেশে রওনা দিতে সেখান থেকে তিনি বিমানবন্দরে গেছেন।
আগামীকাল বুধবার সকাল ৯টায় মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় সাইপান অঞ্চলের একটি আদালতে হাজির হবেন অ্যাসাঞ্জ। সেখানে তাকে ৬২ মাসের সাজা ঘোষণা করা হতে পারে। তবে ইতোমধ্যেই তিনি এই সাজা ভোগ করে ফেলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের চুক্তি অনুযায়ী, তাকে আর যুক্তরাষ্ট্রে কারাভোগ করতে হবে না। তিনি যে সময়টায় যুক্তরাজ্যে কারাভোগ করেছেন সেটাই তার সাজা ভোগের সময় হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তিনি মুক্তি পাওয়ার পর পরই উইকিলিকসের পক্ষ থেকে সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলা হয়, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এখন মুক্ত।
কারাগারের ছোট্ট একটি কক্ষেই ১ হাজার ৯০১ দিন কাটানোর পর স্থানীয় সময় রোববার (২৪ জুন) সকালে তিনি বেলমার্স কারাগার ত্যাগ করেন। লন্ডনের হাইকোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে এবং মুক্তি পাওয়ার পর বিকেলে স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দর থেকে একটি বিমানে চড়ে তিনি যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেন।
এদিকে সামাজিক মাধ্যমে তার স্ত্রী স্টেলা এক পোস্টে লিখেছেন, জুলিয়ান এখন মুক্ত। তোমার প্রতি আমাদের অপরিসীম কৃতজ্ঞতা আমরা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। এটা সত্যি করতে যারা বছরের পর বছর ধরে একত্রে কাজ করেছেন তাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এর আগে ২০১৯ সালের এপ্রিলে লন্ডন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এর আগে সাত বছর ধরে তিনি ব্রিটেনের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজৈনিতক আশ্রয়ে ছিলেন। যৌন সহিংসতার অভিযোগে করা একটি মামলায় সুইডেনে প্রত্যার্পণ এড়াতে সাত বছর আগে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ।
২০১০ সালে সুইডেনে দুই নারীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। কিন্তু পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে বরাবরই আসাঞ্জ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বেশ কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে ২০০৬ সালে উইকিলিকস নামের ওয়েবসাইটটি চালু করেন অ্যাসাঞ্জ। এই সাইটে তিনি একের পর এক গোপন মার্কিন নথিপত্র প্রকাশ করতে থাকেন। এ কারণে বিব্রত যুক্তরাষ্ট্র তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
২০১০ সালের জুলাইয়ে উইকিলিকস আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানের প্রায় ৭০ হাজার শ্রেণিবদ্ধ নথি প্রকাশ করে। এসব তথ্য পরে বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এছাড়া ওই বছরের অক্টোবর নাগাদ ইরাক আক্রমণের চার লাখ নথি এবং যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই লাখ কূটনৈতিক তারবার্তা প্রকাশ করে অ্যাসাঞ্জের প্রতিষ্ঠান। সে সময় রীতিমত হইচই পড়ে যায়।