রাশিয়ার দাগেস্তানে গত রোববার দুটি ইহুদি উপাসনালয় (সিনাগগ), গির্জা ও পুলিশের একটি তল্লাশিচৌকিতে হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১ জন ধর্মযাজক ও অন্তত ১৫ জন পুলিশ সদস্য। খবর ডয়চে ভেলের।
দাগেস্তানের রাজধানী মাখাচকালা ও কাস্পিয়ান সাগরতীরের শহর দিয়ারবিয়েন্তেতে হামলাগুলো হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। তবে দক্ষিণ-মধ্য এশিয়ায় সক্রিয় ইসলামিক স্টেট-খোরাসানের আল-আজাইম এক বিবৃতিতে হামলার জন্য ‘ককেশাসের ভাইদের’ প্রশংসা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার এক গবেষণা নোটে লিখেছে, ইসলামিক স্টেটের উত্তর ককেশাস শাখা উইলায়াত কাভকাজ ‘সম্ভবত হামলাটি করেছে’।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর পাশে একটি কনসার্ট হলে বন্দুকধারীদের হামলায় ১৪৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনার মাস তিনেক পর দাগেস্তানে একযোগে কয়েকটি জায়গায় এ হামলার ঘটনা ঘটল। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) মস্কোয় হামলার দায় স্বীকার করেছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সেটা ছিল রাশিয়ার ভূখণ্ডে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা।
এক সপ্তাহ আগে রাশিয়ার রস্তভ এলাকার কারাগারে বিক্ষোভ হয়েছে। এর পেছনেও আইএসের সম্পৃক্ততা ছিল বলে সন্দেহ করা হয়। গত অক্টোবরে একদল বিক্ষোভকারী ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ইসরায়েলের তেল আবিব থেকে আসা ইহুদি যাত্রীদের ‘ধরতে’ রাশিয়ার বিমানবন্দরে ঢুকে পড়েছিলেন।
এসব ঘটনার পর রাশিয়ার গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তারা ব্যস্ত থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
দাগেস্তান ও এর আশপাশের এলাকার জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা সংস্থা দ্য খোরাসান ডায়েরির গবেষণা বিভাগের পরিচালক রিকার্ডো ভ্যালে বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়া যুদ্ধ করার কারণে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে আইএস ও অন্যান্য জিহাদি গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছিল।
রিকার্ডো ভ্যালে আরও বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আইএস নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব ও মস্কোর মধ্যে সহযোগিতায় ভাটা পড়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা–সংক্রান্ত রাশিয়ার সম্পদও দাগেস্তান থেকে অন্যত্র চলে গেছে। দাগেস্তানে সাম্প্রতিক হামলা ‘গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে অনেক ফাঁক’ থাকার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দপ্তর ক্রেমলিনের সাবেক উপদেষ্টা সের্গেই মারকভ বলেছেন, মৌলবাদী ইসলাম আবার রাশিয়ায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। এটা স্পষ্ট যে ইসলামি সন্ত্রাসবাদের সমস্যা আছে, এটা মারাত্মক।
১৯৯০ দশকের শেষ থেকে ২০০০ দশকের শুরুর দিক পর্যন্ত রাশিয়াজুড়ে সাধারণ নাগরিকদের ওপর নিয়মিত জঙ্গি হামলা হয়েছে। সাম্প্রতিক হামলার কারণে ওই সময় আবার ফিরে আসছে কি না, সে বিষয়ে পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্র পেসকভের কাছে জানতে চেয়েছিলেন একজন সাংবাদিক। তবে পেসকভ সেই শঙ্কা কম বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়া এখন অন্য রকম। দাগেস্তানে যে ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, সেটা রাশিয়া কিংবা দাগেস্তানের সমাজ সমর্থন করে না।’