ঈদের ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৫৮ জন নিহত এবং এক হাজার ৮৪০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বুধবার (২৬ জুন) ঢাকায় বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ-২০২৪ এর তথ্য তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, পবিত্র ঈদুল আজহায় যাতায়াতে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩০৯টি দুর্ঘটনায় ৪৫৮ জন নিহত এবং ১৮৪০ জন আহত হয়েছেন। এসময় রেলপথে ২২টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ৬টি দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ৬ জন আহত এবং ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ৩৩৭টি দুর্ঘটনায় ৪৮৮ জন নিহত ও ১৮৫০ জন আহত হয়েছেন। ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তারা বলছে, এবারের ঈদে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পরিবহন ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষের কম যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো ছিল। ঈদের আগে ৩ দিন সরকারি ছুটি থাকায় যাত্রী চাপ কিছুটা ভাগ হয়েছে। দেশে ঈদযাত্রায় মোট যাতায়াতের প্রায় ৭ থেকে ৯ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার তৎপরতা ছিল লক্ষ্যণীয়। ছোট ছোট যানবাহন বিশেষ করে ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। কোনো কোনো সড়কে এসব যানবাহন হঠাৎ করে জাতীয় মহাসড়কে উঠে আসার কারণে, জাতীয় মহাসড়কে এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, এছাড়াও সড়কে চাঁদাবাজি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহনসহ নানা কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েছে। একই সঙ্গে সড়কে ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে নিম্নআয়ের লোকজন ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও খোলা ট্রাকে যাতায়াতে বাধ্য হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে আরও দেখা গেছে, ঈদযাত্রা শুরুর দিন ১০ জুন থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ২৪ জুন পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যমতে, ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জন নিহত ও ৭৬২ জন আহত হয়েছেন।
অপরদিকে, ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের আগে পরে ১৪ দিনে ১০৭৮ জন সড়ক দুর্ঘটনার রোগী ভর্তি হয়েছে। যার মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাত বা পা ভেঙে ভর্তি রোগী ৪৭৮ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর ১৫ শতাংশ হাসপাতালে অথবা বাসায় চিকিংসারত অবস্থায় মারা যায়। সেই হিসেবে এবারের ঈদে ৪৫৮ জন নিহত ও ১৮৪০ জন আহত হয়েছেন। দেশে প্রায় ৯ হাজার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালে ঈদের আগে-পরে ১৫ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত কতজন রোগী ভর্তি হয়েছে তা জানানোর জন্য বিআরটিএর কাছে দাবি জানানো হয়।
বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল আজহার যাতায়াতের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ১১.৫৫ শতাংশ, মৃত্যু ৫৩.১৭ শতাংশ ও আহত ২৩৮.২৩ শতাংশ বেড়েছে।
এ ছাড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ১৩২ মোটরসাইকেল দুঘটনায় ১৩০ জন নিহত ও আহত হয়েছে ৫৯৯ জন । যা মোট দুর্ঘটনার ৪২.৭১ শতাংশ, মোট নিহতের ২৮.৩৮ শতাংশ, মোট আহতের ৩২.৫৫ শতাংশ।