ভারতের লোকসভায় স্পিকার নির্বাচন হতে চলেছে। বিরোধী ‘ইনডিয়া’ জোটের স্পিকার পদপ্রার্থী কংগ্রেসের কে সুরেশ। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই সুরেশের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
মূলত স্পিকার পদপ্রার্থী নিয়ে দুই মেরুতে ছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল। তবে কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি ও দলটির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা রাহুল গান্ধীর উদ্যোগে সেই মতবিভেদ অনেকটাই কেটে গেছে। স্পিকার নির্বাচন নিয়ে এখন কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছে মমতার তৃণমূল।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন এই দলটি স্পিকার পদে কংগ্রেসের কে সুরেশকে সমর্থন করবে। বুধবার (২৬ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হযেছে, তৃণমূল কংগ্রেস আজ লোকসভার স্পিকার নির্বাচনে কংগ্রেসের কে সুরেশকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বেশ কয়েকটি সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন দলটি গতকাল বলেছিল, কে সুরেশকে এনডিএ প্রার্থী ওম বিড়লার বিরুদ্ধে মাঠে নামানোর আগে তাদের সাথে পরামর্শ করা হয়নি এবং এই সিদ্ধান্তটিকে তারা ‘একতরফা’ বলেও অভিহিত করেছিল।
মমতা ব্যানার্জির ভাতিজা এবং তৃণমূল সংসদ সদস্য অভিষেক ব্যানার্জি গতকাল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়নি, কোনও আলোচনাও হয়নি। দুর্ভাগ্যক্রমে, এটি একতরফা সিদ্ধান্ত।’
সুরেশ অবশ্য পরে স্পষ্ট করেন, তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং কল্যাণ ব্যানার্জি গতকাল সন্ধ্যায় বিরোধী ইনডিয়া ব্লকের মিটিংয়ে যোগ দিয়েছিলেন এবং ‘সবকিছু মিটমাট’ হয়ে গেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, লোকসভায় অধিবেশন কক্ষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে কথা আর সংসদের নিম্ন কক্ষ থেকে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র স্পিকার পদপ্রার্থী নিয়ে তৃণমূলের অসন্তোষ অনেকটাই কাটিয়ে ফেলেছেন রাহুল গান্ধী।
এর আগে লোকসভায় স্পিকার নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানান অভিষেক। তৃণমূলের নেতৃত্বের ক্ষোভের কথা জানার পরেই তাকে পাশে বসিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট কথা বলতে দেখা যায় রাহুলকে।
সূত্রের খবর, স্পিকার পদের প্রার্থীর নাম নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা না করার জন্য অভিষেকের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন রাহুল গান্ধী। সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ শেষে লোকসভা থেকে বেরিয়ে মমতাকে ফোন করেন তিনি।
রাহুল তৃণমূল নেত্রীকে বোঝান, কোন পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি কেন সুরেশের নাম ঘোষণা করতে হয়েছে। সাম্প্রতিক রাজনীতিতে রাহুলের পক্ষ থেকে মমতাকে ফোন কিছুটা অভূতপূর্ব বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজনীতির অনেকের মতে, ‘ইন্ডিয়া’র বৃহত্তর স্বার্থে মমতা, অভিষেকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে দূরত্ব অনেকাংশেই কমাতে সক্ষম হয়েছেন রাহুল।
তিনবারের সংসদ সদস্য ও গত লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা স্পষ্টতই এই নির্বাচনে এগিয়ে রয়েছেন। সাতজন সংসদ সদস্য এখনও শপথ নেননি এবং কেরালার ওয়ানাড় আসনটি খালি রয়েছে। এর মানে হলো ৫৩৫ জন সংসদ সদস্য আজ ভোট দিতে পারবেন এবং স্পিকার পদে জয়লাভের জন্য ২৬৮টি ভোট পেতে হবে।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের ২৯৩ জন সংসদ সদস্য এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির চারজন সংসদ সদস্যের সমর্থন রয়েছে। বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ভোটাভুটিতে বিজেপি ৩০০ অতিক্রম করতে অন্যান্য সংসদ সদস্যদের সাথেও যোগাযোগ করছে।
অন্যদিকে, বিরোধী দল একটি রাজনৈতিক পয়েন্ট তৈরি করতে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য করেছে। আট মেয়াদের সংসদ সদস্য হওয়া কে সুরেশের পেছনে ২৩৩ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন রয়েছে (তৃণমূলের ২৯ জনসহ)। যদিও তা সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংখ্যা থেকে ৩৫ কম।